করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে করা আবেদনটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার রাত ১১ টার দিকে ধানমন্ডির নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনারা জানেন, আদালত কর্তৃক তার দুইটি মামলায়…একটি মামলায় তো তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবং তিনি সেই সাজা খাটছিলেন।
‘যখন তার পরিবার থেকে আবেদন আসল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতাবলে, তার সরকারের ক্ষমতাবলে, সেই দণ্ডাদেশ স্থগিত করে, তাকে চিকিৎসার জন্য বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং চিকিৎসা নেয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। এবং সেই হিসাবে তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা নিচ্ছেন।
‘বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই আজ রাত সাড়ে আটটায় আবার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি (খালেদা) হসপিটালে ভর্তি আছেন। তাকে বিদেশ নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারণ আমাদের দেশের ডাক্তাররা এই ধরনের অভিমত দিচ্ছে। আমরা যদিও ডাক্তারদের কাছ থেকে শুনি নাই।
‘আমরা এই বিষয়ে তাদের ইয়ে..দেখেছি।…আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অত্যন্ত উদার। আমরা পজিটিভলি সেটা দেখার চেষ্টা করব। আমরা কী আইনের পর্যায়ে হবে, সে জন্য কালকের মধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী ডিসিশন কী করা যেতে পারে, তাই আমরা অলরেডি সেটি (আবেদনটি) পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন এর মধ্যে অনেক কিছু জড়িত আছে। বিদেশ যেতে হলে কোর্টের কোনও ইয়ে লাগবে কি না সেটার ব্যাপার আছে। সে জন্য আমরা আইনমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে (আবেদন) পাঠিয়ে দিয়েছি। তার কমেন্টটা আসুক, তার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই আমরা পজিটিভলি দেখছি। পজিটিভলি দেখছি বলেই তাকে (খালেদা জিয়া) দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তার চিকিৎসার সুবিধার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। সে যদি উন্নত চিকিৎসা পায়, তার পছন্দমতো, তার চাহিদা অনুযায়ী, তার পছন্দ অনুযায়ী যেন চিকিৎসা পায়, তার ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের ওই আবেদনে কোনও সুনির্দিষ্ট দেশে বিএনপির নেত্রীকে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পত্রটা খুব কেয়ারফুলি দেখতে পারিনি। আসা মাত্রই পাঠিয়ে দিয়েছি।’
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।