২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবের মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আগের রাতে হেফাজতে ইসলামের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি করার পর এই বক্তব্য এসেছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিজ কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
আগের রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন হেফাজতের আট নেতা। গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধের পাশাপাশি তারা দাবি তোলেন শাপলা চত্বরের মামলা প্রত্যাহারের।
বৈঠক থেকে বের হয়ে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী এই বিষয়টি জানান সাংবাদিকদের। তবে মন্ত্রী তাদের কথা শুনলেও কোনো আশ্বাস দেননি বলে জানান।
আট বছর আগের মামলাগুলোর তদন্ত পরে গতি হারালেও হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক সহিংসতার পর সেগুলো আবার সচল হয়েছে।
২০১৩ সালের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা গণ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কর্মীদেরকে ধর্মদ্রোহী দাবি করে তাদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম। ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে ব্যাপক সহিংসতা করে হেফাজত কর্মীরা। হঠাৎ করে শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।
বিকেলে সমাবেশ শেষ করে ঘটনাস্থল ছাড়ার কথা থাকলেও পরে তারা সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। রাতে এক পর্যায়ে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হতে থাকে। একের পর এক আক্রমণ হয় দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শাপলা চত্বরের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান হেফাজতের মহাসচিবচরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সরকার শাপলা চত্বর ছাড়তে সময় বেঁধে দেয়। তবু অনড় থাকা হেফাজত কর্মীদেরকে সরিয়ে দিতে মধ্যরাতে শুরু হয় অভিযান।
সে সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। অভিযান। তবে ভোরের দিকে রণে ভঙ্গ দেয় হেফাজত কর্মীরা। দুই হাত তুলে বিভিন্ন অলি গলি থেকে বের হয়ে আসে হাজার হাজার হেফাজত কর্মী।
সে সময় হেফাজতে তাণ্ডবের ঘটনায় কেবল ঢাকায় মামলা হয় ৫৩টি। এর মধ্যে ছয়টি মামলার প্রতিবেদন দেয়া হলেও বাকি ৪৭টি ঝুলে থাকে।
তবে গত ২৬ মার্চ থেকে হেফাজত আবার সহিংস হয়ে উঠার পর যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে ধরা হচ্ছে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলার আসামিদেরও। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারএরই মধ্যে হেফাজতের এক নেতা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়ে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের আগে বিএনপির সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। পরে অবশ্য বিএনপি ও হেফাজতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই তথ্য অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে।
২০১৩ সালে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম আদালতে বলেন, ৫ মের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন সে সময়ের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
সে সময় বিএনপি ও জামায়াত অর্থ সহায়তাও দিয়েছিল হেফাজতকে। আর কর্মসূচিও অংশগ্রহণও ছিল তাদের।
যারা অর্থ সহায়তা দিয়েছে, তাদেরকে ধরা হবে কি না- এমন প্রশ্নে গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। আমরা যাদের যাদের দোষী শনাক্ত করতে পারব, তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’
ধরা হচ্ছে ভিডিও ফুটেজ দেখে
গত ২৬ মার্চ থেকে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে জড়িতদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও জানান হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘নিরপরাধ কেউ হলে আইনের আওতায় আসবে না, যারা অপরাধী তারা ছাড়া পাবে না।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজত বায়তুল মোকাররমে যে সহিংসতা করে, তার প্রেক্ষিতে নানা গুজব রটিয়ে চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়।
গত ২৬ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত হেফাজত নেতারা দেশের নানাস্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা‘সারাদেশের এইসব সহিংসতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। যারা নাশকতায় জড়িত ছিল এবং যারা নাশকতার উস্কানি দিয়েছে তাদেরকেই আমরা গ্রেপ্তার করছি। যারা কোনো অপরাধ করেনি তারা নির্বিঘ্নে তাদের বাড়িতে থাকতে পারে, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
নিরীহদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমাদের কাছে একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া আছে।’
নাশকতার ঘটনায় যারা অনলাইনে গুজব রটিয়ে উসকানি দিয়েছে তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে জানান গোয়েন্দা প্রধান।