রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের গুলি করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমচত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এ ঘটনায় প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেন তারা।
সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সভা নিয়ে উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকদের সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। ওই সময়ই চাকরিপ্রত্যাশী এক ছাত্রলীগকর্মী শিক্ষকদের ওপর গুলি চালানোর হুমকি দেন।
ওই চাকরিপ্রত্যাশীর নাম আকাশ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। তারা জানান, আকাশ বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মেহেরচন্ডী এলাকার বাসিন্দা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের একজন।
এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, আগামী ৬ মে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর দুই দিন আগে সিন্ডিকেট সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে এ সভা ডাকা হয় বলে তাদের ধারণা।
এ আশঙ্কায় সভা বন্ধের দাবিতে সকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান শিক্ষকরা। তবে তাদের আগেই সেখানে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের চাকরিপ্রত্যাশী বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা। শিক্ষকরা বাসভবনে ঢুকতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
ওই সময় ছাত্রলীগকর্মী আকাশ চিৎকার করে বলেন, ‘এই... গুলি করে দেব কিন্তু স্যার’। এর পর ওই স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ছাত্রলীগকর্মীর গুলি করার হুমকি দেয়ার ঘটনায় প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে নিয়ম অমান্য করে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করায় উপাচার্যকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী জানান, সোমবার রাতে উপাচার্যের জামাতার নেতৃত্বে বহিরাগত ক্যাডাররা সিনেট ভবনের তালা ভেঙে সিন্ডিকেট সংক্রান্ত কাগজপত্র বের করে নিয়ে আসেন। ১৫০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে কাগজ তৈরি করা হয়।
তিনি আরও জানান, দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে সিন্ডিকেট বন্ধ করার চেষ্টা করলে উপাচার্যের জামাতা ও প্রক্টরের নেতৃত্বে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় বহিরাগত ক্যাডার বাহিনী শিক্ষকদের গুলি করার হুমকি দেয়। এক্ষেত্রে প্রক্টরের ভূমিকা ন্যক্কারজনক।
শিক্ষকরা দাবি করেন, তারা কারও নিয়োগের বিরোধী নন। কিন্তু প্রচলিত বিধি মোতাবেক স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে হবে।
এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। তা ছাড়া সিন্ডিকেটে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই। সভা ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা হয়।’
গুলি করার হুমকির বিষয়টি তার জানা নেই বলে দাবি করেন প্রক্টর।