সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে এই পদে নতুন করে কাকে নির্বাচিত করা হবে তা নিয়ে হট্টগোল হয়েছে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে।
তবে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের দাবি কণ্ঠভোটে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দাবি হট্টগোল হওয়ায় সাধারণ সভা মুলতবি করা হয়েছে। কাউকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়নি।
১৪ এপ্রিল খসরুর মৃত্যুতে সভাপতি পদটি শূন্য হয়। এ অবস্থায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। সাধারণ সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন কে করবেন তা নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বারের আর্টিকেল ১৬ তে আছে যদি কোনো কারণে পদ শূন্য হয়। সভাপতি পদত্যাগ করেন বা পদচ্যুত করা হয় কিংবা মারা যান তাহলে বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে নতুন একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সেই বিশেষ সাধারণ সভায় কীভাবে সভাপতি হবেন তা নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি শুনতে পেলাম যে, আজকে বিশেষ সাধারণ সভায় ওনারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন, সেখানে অন্যকোনো নাম প্রস্তাব নাকি হয়নি। তারপরে আমার নাম সমর্থন করেছেন। আমি এখনও রেজুলেশন পাইনি। রেজুলেশন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে পারব।
‘বারের সবাই আমাদের যদি নির্বাচিত করে, তাহলে গত দুই বছর বারের উন্নয়নে যে রূপ কাজ করেছি। বিশেষ করে বহুতল ভবন করার জন্য আমরা যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। প্রয়াত সভাপতি আবদুল মতিন খসরু নির্বাচিত হলেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তার মৃত্যু হয়েছে। এখন তার মৃত্যুর কারণে বারের সভাপতি পদ যে শূন্য হয়েছে, বারের সাধারণ সদস্যরা মনে করছেন আমার মাধ্যমে বারের দাবিটা হয়তো পূরণ হবে। সেই কারণে ওনারা হয়তো আমার নাম প্রস্তাব করেছেন।’
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হলেও দায়িত্ব নেয়ার আগেই করোনায় মারা যান আবদুল মতিন খসরুঅন্যদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, সাধারণ সভা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে এই পদ পূরণে কি পদ্ধতিতে পূরণ করা হবে তার করণীয় ঠিক করতে আজকে বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল। এই সাধারণ সভার পর এজেন্ডা ছিল নির্বাচনের পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে। সভাপতি নির্ধারিত ছিল দুপুর দুইটায়।
তিনি বলেন, ‘আমি এই সভার সম্পাদক হিসেবে সভা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, সাধারণ সভার জন্য যে ব্যানার করা হয়েছিল, সেটি টানানো হয়েছিল। সভার শুরুতে দেখি ভিন্ন একটি ব্যানার। যেখানে সভার সভাপতিত্ব করার জন্য একজন সহ সভাপতির নাম রয়েছে। সভার শুরুতে কে সভাপতিত্ব করবেন সিনিয়র সহ সভাপতি নাকি সহ-সভাপতি এ বিষয়ে যখন আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছিলাম। তখন আইনজীবীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন সভা পরিচালনা করা সাধ্যছিল না। সভা মুলতবি করতে বাধ্য হই।’
সভায় অংশ নেয়া বারের কয়েকজন সদস্য জানান, সভার শুরুতে সাধারণ সভার সভাপতিত্ব নিয়ে আওয়ামী এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এ অবস্থায় সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে বারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি এ সভা পরিচালনা করবেন। তখন এক পক্ষ বিরোধিতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী, বারের নির্বাচিত সহ সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ ডায়েসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন।
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “উনাকে (শফিক উল্লাহ) সভাপতিত্ব করার কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ সভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্লাহ বলেন, ‘আমি আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন’। তখন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন।
“এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘কণ্ঠ ভোট নয়, নির্বাচন চাই’। এক পর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।”
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২০২২ সালের নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আবদুল মতিন খসরু নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিজয় হলেও দায়িত্ব নেয়ার আগেই তিনি করোনা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৪ এপ্রিল তিনি মারা যান। তারপরই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপরই নতুন করে সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪ পদের মধ্যে সভাপতিসহ আটটিতে আওয়ামী আইনজীবীদের সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ ছয়টি পদে বিএনপিপন্থি নীল প্যানেল জয়লাভ করে।