জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন শাহাদাত হোসেন মোল্লা। সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহাদাত মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন স্পিডবোটে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছাতে পারেননি শাহাদাত। মাদারীপুরের শিবচরে দাঁড়িয়ে থাকা বালুবাহী একটি বাল্কহেডকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায় তাদের স্পিডবোট। সেখান থেকে পরে শিশুসহ ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে একজন শাহাদাত।
নিহত শাহাদাত হোসেন মোল্লার বাড়ি মাদারীপুরেরর শিবচর উপজেলার নিয়ামতকান্দী গ্রামে।
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো শাহাদাতের মৃত্যুর বিষয়টি এরই মধ্যে জেনেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালসহ অন্যরা।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া থেকে সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় স্পিডবোটটি ছেড়ে যাচ্ছিল কাঁঠালবাড়ীর পুরাতন ঘাট এলাকায়। সেখানেই ঘটে এমন দুর্ঘটনা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আদম আলী মোল্লা ও রিজিয়া বেগম দম্পতির ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শাহাদাত। তিনি চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্পিডবোটশাহাদাত হোসেন মোল্লার চাচাতো ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য দাদন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেন শাহাদাত। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা যান। ইন্টারভিউ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
‘চাকরি করা হলো না শাহাদাতের। লাশ হয়ে তাকে ফিরতে হলো। লকডাউনের ভেতর ঢাকা যেতে না বলেছিলাম। তবুও গেছে। ইন্টারভিউ শেষে বাড়ি ফিরতে পারেনি শাহাদাত’, বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন দাদন মোল্লা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
‘শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়েছে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ লাশ হস্তান্তর করার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
তার মৃত্যুতে সহপাঠী ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনা তদন্তে কমিটি
মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট উল্টে ২৬ ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) রহিমা খাতুন।
মরদেহ উদ্ধার করে হস্তান্তর করতে রেখেছে ফায়ার সার্ভিসঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সোমবার দুপুরে ডিসি বলেন, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ডিসি রহিমা আরও জানান, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসাতেও সহযোগিতা করা হবে।