তিন মাসের ব্যবধানে বাগেরহাটের সুন্দরবনে আবারও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এবার আগুন লেগেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায়। দুই একর জায়গাজুড়ে জ্বলছে আগুন। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় ।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তাদের সহযোগিতা করছেন বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন।’
বাগেরহাট সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়াতে না পারে সে জন্য আমরা দুই একর এলাকার আগুনের চারপাশে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফায়ার ক্যানেল কাটা শুরু করেছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
তিনি জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ও কী পরিমাণ জায়গাজুড়ে আগুন ছড়িয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তিনি আরও জানান, শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে ধান সাগর স্টেশনের কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ও শরণখোলা স্টেশনের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নাকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে আগুন লাগার মূল কারণ উদঘাটন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বনবিভাগের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। সেখানে ফায়ার সার্ভিস, কমিউিনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) সদস্য, বনরক্ষী ও এলাকাবাসী যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বনের প্রায় দুই একর এলাকাজুড়ে আগুন জ্বলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় প্রাকৃতিকভাবেই বনের মধ্যে থাকা শুকনো পাতার স্তুপে প্রথমে আগুন লাগেে এবং পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।
২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই সময় চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।
গত ২০ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে ২১ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সুন্দরবনের প্রায় ৭৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়, ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প ও আড়ুয়াবের খালে, ২০০৫ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের আড়ুয়াবের খালের পশ্চিমে তুলাতলা ও খুটাবাড়ি এলাকায় আগুন লাগে।
এর পর ২০০৬ সালেই তেরাবেকা খালের পাড়ে, আমুরবুনিয়া, কলমতেজিয়া, পচাকুড়ালিয়া বিল ও ধানসাগর স্টেশন এলাকায় পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
২০০৭ সালে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নলবন, পচাকুড়ালিয়া বিলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী, ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, ২০১৪ সালে আবারও ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন বনে অগ্নিকাণ্ড হয়।
২০১৬ সালেও ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, পচাকুড়ালিয়া, তুলাতলী এবং ২০১৭ সালে একই স্টেশনের মাদরাসার ছিলা নামক স্থানে আগুন লাগে।