রাজধানীর বংশাল এলাকায় রাস্তা থেকে অপহৃত শিশু রাশিদা আক্তারকে অপহরণকারী নারীর সঙ্গে থাকা তিন শিশুর পরিচয় জানতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিন শিশুর প্রকৃত বাবা-মা শনাক্ত করা হবে।
অপহরণের ঘটনায় করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আলী শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, অপহরণকারী নীলা বেগমের কাছ থেকে দুই বছর বয়সী শিশু রাশিদা আক্তারকে উদ্ধার করে রোববার আদালতের মাধ্যমে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আসামি নীলা বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার হেফাজতে থাকা ৫ ও ৩ বছর বয়সী দুই শিশুকে তার সঙ্গেই রাখা হয়েছে। ১০ বছর বয়সী আরেক শিশুকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
শিকদার জানান, রাজধানীর বংশাল রোডে প্রায়ই পরিত্যক্ত বোতল ও কাগজ কুড়িয়ে থাকেন সুমা আক্তার। গত ২৫ এপ্রিল বিকেলের দিকে মেয়েকে একটি মিষ্টির দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসিয়ে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া নানা ধরনের আবর্জনা বস্তায় ভরছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ফিরে দেখেন ছোট্ট মেয়েটি সেখানে নেই।
খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে দুই দিন পর বংশাল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সুমা। এর ভিত্তিতে বংশাল রোডের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ ধরে তদন্তে নামে পুলিশ।
বংশাল থানার পুলিশ বলছে, রাশিদাকে তুলে নিয়ে যায় একজন নারী। তার নাম নীলা বেগম। শিশুটিকে ভিক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য তুলে নেয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা সিকদার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে তিনটি ছোট শিশু এসে রাশিদার কাছে বসে। তারা কিছুক্ষণ কথা বলে, কিছুক্ষণ খেলাও করে। এরপর সাদা প্যাকেটে করে রাশিদাকে কিছু একটা খেতে দেয়া হয়।
ওই তিনটা শিশুর মধ্যে যার বয়স ১০ বছরের মতো, তার মাথা ও মুখ কাপড় দিয়ে হিজাবের মতো ঢাকা ছিল। সে একপর্যায়ে রাশিদাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। তারপর তাকে কোলে তুলে নেয়।
এসআই শিকদার বলেন, ফুটেজে দেখা গেছে, ১০ বছরের মেয়েটি কিছুদূর গিয়ে রাস্তা পার হয়েছে। তখন পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক কেউ সঙ্গে ছিল না। তাদের মা আলাদা করে আগে রাস্তা পার হয়েছেন। এই শিশুদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক আছে, তা শুরুতে বোঝা যায়নি। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করে।
যেভাবে উদ্ধার হলো রাশিদা
পুলিশ কর্মকর্তা সিকদার বলেন, ‘শুধু ফুটেজ দেখে অবশ্য বোঝা যায়নি শিশুটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে তিনটি বাচ্চাকে ফুটেজে দেখা গেছে, তাদের পরনের পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা দরিদ্র। আমরা আশপাশে যত বস্তি আছে সেসব জায়গায় খোঁজ নিই। ‘ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের শহীদনগর বস্তির ম্যানেজারের চোখে পড়েছে, তার একজন ভাড়াটিয়ার তিনটি বাচ্চা। কিন্তু আরও একটি শিশুকে কয়েক দিন ধরে তাদের ঘরে দেখা যাচ্ছে এবং শিশুটিকে মারধর করা হচ্ছে। বাচ্চাটি কান্নাকাটি করে।’
এই তথ্যের ভিত্তিতে ছয় দিন পরে রাশিদাকে উদ্ধার করে রোববার আদালতে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধারের সময় শিশুটির দুই চোখেই কালশিটে, শরীরের নানা স্থানে আঘাতের নীল চিহ্ন পাওয়া যায়। পিঠ ও নিতম্বে আঘাতের চিহ্ন বেশি স্পষ্ট ছিল। পরে শিশুটিকে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় রাশিদার মা থানায় অপহরণ মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তের সূত্র ধরে আসামি নীলার সঙ্গে থাকা অন্য শিশুদেরও পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। যদিও আসামি নীলা বেগম ওই শিশু তিনটিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন।
বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মীর রেজাউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপহরণকারী নারী পুলিশের কাছে নিজেকে ভাসমান ভিক্ষুক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার স্বামী অনেক আগে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।‘তার সঙ্গে থাকা তিন শিশুকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেন তিনি। তবে তার কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তাই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শিশু তিনটির প্রকৃত বাবা-মা শনাক্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাশিদাকে ভিক্ষায় ব্যবহারের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চেহারা বিকৃত করে অসুস্থ দেখানোর জন্য তাকে মারধর করা হয়েছে।