একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও তদন্ত কমিটিতে আটকে আছে ফল। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম রুট শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে বড়-ছোট দুর্ঘটনা ঘটলেও এর সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধানে আসতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সোমবারও কঠোর নজরদারি না থাকায় লকডাউন অমান্য করে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন করায় নিহত হয়েছেন ২৭ জন। এ ঘটনাতেও গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। পুলিশের দাবি, ঘাট থেকে নয়। স্পিডবোট ছেড়ে গেছে পাশের কোনো একটি চর থেকে।
প্রমত্তা পদ্মা নদী চলাচলের জন্য এমনিতেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এরই মধ্যে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন নৌযান।
২০১৪ সালের ৪ আগস্ট এই রুটের মাওয়া অংশে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। ৪৯ যাত্রীর লাশ উদ্ধার হলেও নিখোঁজ হন ৫৩ যাত্রী। উদ্ধার হয়নি লঞ্চটিও। এরপর এ দুর্ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় আসামিরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
হাইকোর্টের আদেশে মেরিন কোর্টে হওয়া মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে থানায় করা মামলাটি চলছে। ২০১৯ সালে এই মামলায় চার্জশিট হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের ৬ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি বিচারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামি হলেন, লঞ্চমালিক আবু বক্কর সিদ্দিক কালু ও তার ছেলে ওমর ফারুক লিমন, গ্রিজার সাত্তার মোল্লা, লঞ্চমালিক সমিতির সুপারভাইজার (টাইমকিপার) কাসেম হালদার, মো. মিনিস্টার ও লঞ্চচালক গোলাম নবী। তবে এর মধ্যে গোলাম নবী পলাতক রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মামলার আরও দুই আসামি মাদারীপুরের শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাটের ইজারাদার আব্দুল হাই শিকদার ও শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব বেপারিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ এই দুই ইজারাদারই দুই ঘাট থেকে যাত্রী তুলে দিয়েছেন।
পিনাক-৬ লঞ্চডুবির মতো বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি এই রুটে ছোট দুর্ঘটনাও কম নয়।
মাওয়া-কাওরাকান্দি রুট এখন বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুট নামে পরিচিত। এর আগে এই রুটের নাম ছিল শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়িয়া। নদীভাঙনসহ নানা কারণে রুটের ঘাট পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার।
উত্তাল এই নৌরুটে ২০১৩ সালে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় একজন নিহত এবং ২০১৪ সালে পিনাক-৬ ডুবিতে নিহত হয় শতাধিক যাত্রী।
একই রুটে দুর্ঘটনায় ৮ যাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায় ২০২০ সালেও। স্থানীয় লোকজন জানান, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি, ১২ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে তিনটি ছোট স্পিডবোট দুর্ঘটনাও ঘটে। তেমন হতাহতের ঘটনা না থাকায় বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসেনি।
সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটল সোমবার, যাতে প্রাণ হারালেন ২৭ জন। তবে অসচেতন হওয়া ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম যাত্রীদের না দেয়ায় নৌযান ডুবলেই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যায় বহুগুণ।
বাংলাবাজার ঘাটের সঙ্গে জড়িত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পুলিশকে ম্যানেজ না করে লকডাউনের মধ্যে স্পিডবোট চালানো কঠিন। লঞ্চ বন্ধ থাকায় স্পিডবোট মালিক-চালকরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেন। নেয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়াও। এদের সিন্ডিকেটও বিশাল। এর সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির পরিদর্শক সিরাজুল কবির বলেন, ‘লকডাউনের কারণে লঞ্চ এবং স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিমুলিয়া ঘাট থেকে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্পিডবোডটি পাশের একটি চর থেকে অবৈধভাবে ছাড়া হয়। পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা করে। তবে অনেক সময় অসাধু এই চক্রকে থামানো যায় না।
নৌপুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আরিফ বলেন, ‘আমার এই অঞ্চলে অবৈধ কোনো নৌযান চলে না। লকডাউনে স্পিডবোটও চলে না। তবে কীভাবে চলাচল করছে, সেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’