বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘গাড়ি না চললে খামু কী’

  •    
  • ২ মে, ২০২১ ২০:১১

পরিবহনশ্রমিকরা বলছেন, চলমান লকডাউনের মধ্যে মার্কেট, গার্মেন্টস, সরকারি-বেসরকারি অফিস সবই চলছে, তবে কেন শুধু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। লকডাউন কি শুধু গণপরিবহনের জন্য।

‘দিনের টাকা দিনে পাই। এক মাস ধইরা গাড়ি চলে না। ইনকাম বন্ধ, গাড়ি না চললে খামু কী?’

কথাগুলো বলছিলেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবহনশ্রমিক আরিফ মিয়া। গত প্রায় এক মাস কর্মহীন হয়ে থাকলেও সরকার বা মালিক কারও পক্ষ থেকেই কোনো সহায়তা পাননি। জানান, এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না তার।

শুধু আরিফ নন, এমন অবস্থা অধিকাংশ শ্রমিকের। চলমান লকডাউনে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন তারা।

পরিবহনশ্রমিকরা বলছেন, চলমান লকডাউনের মধ্যে মার্কেট, গার্মেন্টস, সরকারি-বেসরকারি অফিস সবই চলছে, তবে কেন শুধু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। লকডাউন কি শুধু গণপরিবহনের জন্য।

বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন চালুর দাবিতে রোববার সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহনশ্রমিকরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে অংশ নেন তারা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালুর ব্যাপারে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে গণপরিবহন চালু না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারির কথা জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

গাবতলীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মিডিয়াকর্মীদের দেখে একে একে নিজেদের কষ্টের কথা বলতে শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকরা। ঢাকা-লালমনিরহাট সড়কে চলাচল করা লালন পরিবহনের হেলপার রানা মিয়া।

তিনি বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে বাসের লগে আছি। মালিক খোরাকি দেয়। তা দিয়া কোনোমতে খেয়ে আছি। বাড়িতে বুড়া মা-বাপ আছে। তাদের কিছু দিতে পারি না। সামনে ঈদ, দুই পয়সা নিয়া যে বাড়িত যামু, তার উপায়ও নাই। এইভাবে আর কত দিন।’

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গাড়ি চালাবেন, এই শর্তে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার সব খুলে দিয়েছে, শুধু গণপরিবহন বন্ধ। আমাদের কী দোষ? আমাদের কেন না খাইয়ে মারছেন। আমরাও শর্ত মেনে চলতে চাই। রাস্তায় গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হোক।

তিন দফা দাবিতে রাজধানীর গাবতলী, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, মহাখালীতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরিবহনশ্রমিকদের তিন দফা হলো-

০১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

০২. সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্যসহায়তা প্রদান করতে হবে।

০৩. সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহনশ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে বারবার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু চালু হয়নি। আমাদের এখন না খেয়ে মরার অবস্থা। আমাদের শ্রমিকরা ২০-২৫ দিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করব, গণপরিবহন চালু করে দিন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাব।’

গণপরিবহন চালুর দাবিতে ৪ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

গত ২৪ এপ্রিল এক মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে সরকার গণপরিবহন চালুর সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।

মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর এত দিন চুপ ছিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কিন্তু ২৮ এপ্রিল লকডাউনের মেয়াদ আবার বাড়িয়ে গণপরিবহনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই পরিবহন চালুর দাবি জানাতে শুরু করে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পরে মহানগরগুলোতে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।

শেষ দিকে এসে সময় বেঁধে দিয়ে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত আসে। পরে সরকার আরও দুই দিনের জন্য বিধিনিষেধের সময় বাড়ায়।

কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধসহ লকডাউন আরোপ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ায় সরকার।

কঠোর লকডাউন নিশ্চিতে আরোপ করা হয় ১৩ দফা বিধিনিষেধ। এর মধ্যে শপিং মল, দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও মানুষের জীবন-জীবিকা বিবেচনায় লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

চলমান লকডাউনের মধ্যে ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল আরও বেশি সময় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

তবে লকডাউন বাড়ানো হয় আরও এক দফা, যা বহাল থাকবে আগামী ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত।

এ বিভাগের আরো খবর