বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মামুনুলের বিরুদ্ধে ঝর্ণার ধর্ষণের মামলা

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ১০:৫৬

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ১ ধারায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিয়ে ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার মামুনুল তার (ঝর্ণার) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে না করা এবং আটক রাখার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় এসে ঝর্ণা মামলাটি করেন বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ১ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিয়ে ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার মামুনুল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।’

একটি মাইক্রো গাড়িতে করে থানায় ঝর্ণার সঙ্গে এসেছিলেন তার বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামিও।

ঝর্ণাকে আদালতে তোলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতে ২২ ধারায় তিনি ঘটনার বর্ণনা দেবেন।’

গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে আটক হন মামুনুল। সেই নারীই ঝর্ণা, যাকে কথিত নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী জানিয়ে মামুনুল বলেছিলেন, তার নাম আমিনা তাইয়্যেবা।

সোনারগাঁ থানায় নিজে এসে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন তার রিসোর্ট সঙ্গী। ছবি: নিউজবাংলা

রিসোর্টে মামুনুল যখন বেকায়দায় পড়েন, তখন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো করে হামলে পড়ে রিসোর্টে। ব্যাপক ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেয় মামুনুল হককে।

রিসোর্টে স্থানীয় লোকজনের হাতে ঘেরাও হওয়ার পর মামুনুল ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও তার প্রকৃত নাম, শ্বশুরবাড়ি, শ্বশুরের নাম সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে সেই নারীর দেয়া তথ্যের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

মামুনুল জানান, তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আমেনা তইয়্যেবা। বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম।

মামুনুলের সঙ্গীনি জানান, তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

দুইজনের তথ্যের এই গরমিলের মধ্যেই বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়।

এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর (আমিনা তাইয়্যেবা) সঙ্গে। তিনি তাইয়্যেবাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শ্বাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।

এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে।

পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামুনুল একে একটি ‘মানবিক’ বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার টেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যায়। সে সময় তিনি বিয়ে করে নিয়েছেন তাকে।

প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে ঝর্ণাকে বিয়ে করার ব্যাখ্যায় ইসলামি শরিয়তের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘ইসলামি শরিয়তের মধ্যেও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে যে, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য, স্ত্রীকে খুশি করবার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে, সীমিত ক্ষেত্রে সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’

এরমধ্যে ফেসবুকে ভিডিও লাইভে আসেন ঝর্ণা ও শহীদুলের বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামি। বাবা-মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জামি বলেন, ‘আরও আগের ঘটনা, যখন ডিভোর্স হয়নি। আমি সেই সময় অনেকটা ছোট, আমার ছোটভাই অনেক ছোট। ও দুগ্ধ শিশু ছিল। তখন একবার আমার বাবা বাসায় ছিলেন না, তখন আমি ছিলাম। আমি ঘুমায় ছিলাম বা বাহিরে ছিলাম। তখন নাকি আমার মা আমার ছোট ভাইকে দুগ্ধ পান করাচ্ছিল। তখন উনি (মামুনুল) আমার মায়ের রুমে হুট করে ঢুকে যায় এবং একটা কুপ্রস্তাব দিয়েছিল।’

মামুনুলের অসৎ উদ্দেশ্য তুলে ধরে জামি বলেন, ‘কোনো বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো ঝগড়া হবেই। সে (মামুনুল) তখনই নক করছে। তখনই দুজনের (শহীদুল-ঝর্ণা) মধ্যে আরও ডিস্ট্যান্স বাড়ায় দিছে। এভাবে করে সে একটা পরিবারের খুশি, ভালোবাসা, একটা পরিবারের মধ্যে যে মিলমিশ একটা সম্পর্ক পুরোপুরি সে ধ্বংস করে দিছে। আরও এভাবে কত মানুষের, পরিবারের ভালোবাসা সে ধ্বংস করছে এর কোনো ঠিক নাই।’

হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হকের বিচার দাবি করেন জামি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি আশা করব, আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করব এর যেন সঠিক বিচার হয়, আপনারা কারো অন্ধ ভক্ত হয়েন না। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস কইরেন না। ক্যান, সবারই মুখোশের আড়ালে একটা চেহারা থাকে। এই লোকটা আলেম নামধারি একটা মুখোশধারী একটা জানোয়ার। এর মধ্যে কোনো মানুষত্ব নাই। সুযোগের সব সময় অপেক্ষায় থাকে। কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়। আমার আর কিছু বলার মতো ভাষা নাই।’

এসব ঘটনার মধ্যেই গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও পরে আর অনেক মামলা পাওয়া যায় তার নামে। এসব মামলায় দ্বিতীয় দফায় সাত দিনের রিমান্ডে আছেন মামুনুল।

এ বিভাগের আরো খবর