দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার এবং পাশের দেশ ভারতে বিপর্যকর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলমান ‘কঠোর’ লকডাউন ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
আগের বিধিনিষেধের সঙ্গে আরও ছয়টি ধারা যোগ করে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই ‘কঠোর’ লকডাউনের সময় সামনে আরও বাড়বে কিনা, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় সরকার। তারা বলছে, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আসতে পারে যেকোনো সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি। আগামী দিনগুলোতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে থাকা এবং বিধিনিষেধের সবগুলো মেনে চলার বিষয়ে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। আগামীতে কী হতে যাচ্ছে, সেটা আমরা সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখছি। সে অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা থাকবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই লকডাউনের সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আসলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই আমাদের করতে হবে।’
আর কয়েক দিন পর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে এবার ঈদের নামাজ ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে মসজিদে আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার দেয়া এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে। তবে ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কোনো কার্পেট বিছানো যাবে না। মুসল্লিদের নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে। আর নামাজ শুরুর আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সবাইকে মনে রাখতে হবে জীবন আগে। জীবন বাঁচানোর জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে নিজের জীবনটা রক্ষা করা যায়। এসব মাথায় রেখে কিন্তু আমাদের সব ধর্মীয় উৎসব, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড- সবকিছু আমাদের করতে হবে।’
দোকানপাট, শপিং মল খোলা রেখে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেটা আন-অ্যাভয়েডেবল হলো, শপিং মল অনেক দিন ধরে বন্ধ ছিল। এখন আমরা চাই (মানুষের) চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণটা আমাদের করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের পরিস্থিতি যদি আমরা পর্যালোচনা করি অথবা আমাদের যে ডেথ রেট আছে, আমাদের সেটা কমাতে হবে, সংক্রমণ কমাতে হবে।’
সে জন্যই চলমান ‘কঠোর’ লকডাউন ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
‘দোকানপাট ও শপিং মল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, বাজার কমিটি বা ব্যবস্থাপনায় যারা রয়েছে, বিষয়টি কঠোরভাবে তারা মনিটরিং করবে। স্বাস্থ্যবিধি যাতে শতভাগ প্রতিপালন করা হয়, সেটি তারা দেখবে।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না হলে, সরকার আইন প্রয়োগ করবে।
আগে জারি করা বিধিনিষেধগুলো কার্যকর থাকবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের প্রবেশপথে স্থল, নৌ ও বিমানে যারা আসবেন, সেখানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি বা অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আগের যে বিধিনিষেধ, অফিস-আদালত বন্ধের যে বিধিনিষেধ, রেস্টুরেন্টে বিধিনিষেধ সেগুলো কিন্তু বলবৎ থাকবে।
‘অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে আসার ওপর যে বিধিনিষেধ ছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ডাবল মাস্ক পরা, নো মাস্ক নো সার্ভিস- ওই কথাটা, এগুলো সবাই যেন খুব জোরালোভাবে প্রতিপালন করে।’
পরিস্থিতি উত্তরণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বিশেষ অবস্থার মধ্যে আছি সামনের দিনগুলোতে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে এই পরিস্থিতিটা আমরা মোকাবিলা করতে পারি।’