নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টের সঙ্গীনিকে আমিনা তাইয়্যেবা পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি তার বাবার নাম জাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক।
তবে সেই সঙ্গীনির নাম যে জান্নাত আরা ঝর্ণা আর তার বাবার নাম যে ওলিয়র রহমান, বাড়ি যে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়, সেটি সেই রাতেই প্রকাশ পেয়ে যায়। কিন্তু কে সে জাহিদুল ইসলাম, সেই প্রশ্নের মীমাংসা পরে আর হয়নি।
দুই দিন পরে প্রকাশ পায় তাইয়্যেবা আসলে তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম, যিনি মোহাম্মদপুরের কাদেরাবার হাউজিং এর এক নম্বর সড়কের সাত নম্বর বাড়িতে মামুনুলের সঙ্গেই থাকেন। তবে সেই ঘটনার পর তিনি সন্তানদেরকে নিয়ে সেই বাসা ছেড়ে চলে যান।
কিন্তু জাহিদুল কে, সেটি এতদিন জানা যাচ্ছিল না।
তবে মামুনুলের বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলা তদন্ত করা সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা জানতে পেরেছেন, জাহিদুল ইসলাম প্রকৃতপক্ষে আমিনা তাইয়্যেবার বাবার নাম। তার বাড়ি খুলনায়।
অর্থাৎ মামুনুল হক সেদিন ঝর্ণার পরিচয় লুকিয়ে নিজের স্ত্রী, শ্বশুরের নাম বলেছেন, এলাকার নাম হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তাইয়্যেবার বাবার বাড়ির কথাই।
কেবল স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে নয়, রিসোর্টের নথিতেও একই কাজ করেছেন হেফাজত নেতা। সেখানেও সঙ্গীনির নাম আমেনা তাইয়্যেবার পাশাপাশি বাবার নাম লিখেছেন জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি জানিয়েছেন খুলনা।
নারায়ণগঞ্জের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে ওই নারী পরিচয় লুকাতে গিয়ে মামুনুল হক তার স্ত্রী ও শ্বশুরের নাম বলেছেন। তিনি রিসোর্টে নথিতেও তাদের নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।’
মামুনুল হককে সেদিন হেফাজতের নেতারা রিসোর্ট থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর রাতেই তিনি তার ভাইদের নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন। এসে দাবি করেন ঝর্ণাকে দুই বছর আগেই পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন। তবে নানা ঘটনায় তার সে দাবি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এর মধ্যে ৮ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে তিনি ঝর্ণাকে তাইয়্যেবা নামে পরিচয় দেয়ার কারণ হিসেবে ভয় পেয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তবে নিজের প্রকৃত শ্বশুর ও শ্বশুরালয়ের নাম কেন উল্লেখ করেছেন, সেটা অবশ্য বলেননি।
রিসোর্টকাণ্ডের ১৫ দিন পর গ্রেপ্তার হয়ে মামুনুল এখন পর্যন্ত দুই দফা রিমান্ডে গেছেনমামুনুল সেই রাতের পর বিপাকে পড়তে শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে হয় নাশকতার মামলা। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে নাশকতার মামলার তদন্তও নতুন করে চালু হতে থাকে। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল তিনি গ্রেপ্তার হন।
ঝর্ণাকে তাইয়্যেবা বলার যে ব্যাখ্যা
মামুনুলের রিসোর্ট কাণ্ডের দিন তিনি স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবাকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। রিসোর্টের সঙ্গীনিরে নাম না বলে তিনি স্ত্রীকে বলেন, ‘পুরা বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে আইসা বলব। এই মহিলা যে ছিল সাথে সে আমাদের শহিদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। বুঝছ?
- আরও পড়ুন: ‘সে শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ, বুঝছ?’
‘তুমি একটা ওখানে অবস্থা এমন তৈরি হয়ে গেছে ওখানে ওই কথা বলা ছাড়া ওখানে ওরা ই করে ফেলছিল আমাকে, বুঝছ?’
আচ্ছা, বাসায় আসেন তারপরে কথা যা বলার হবে- বলেন তাইয়্যেবা।
মামুনুল বলেন, ‘বলুম তো, তুমি বিষয়টা অন্যান্য কথা অন্যদেরকে বলতে হইব। পরিস্থিতিডা এ রকম হয়া গেছে। এই জন্য তুমি আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইর না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞাস করলে তুমি বইল যে, আমি সব সব জানি। এই রকম কিছু একটা বইল।’
পরে ৮ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে ঝর্ণার নাম গোপন করে তাইয়্যেবা বলার কারণ ব্যাখ্যা করেন মামুনুল।
- আরও পড়ুন: নাম তাইয়্যেবা বলেছিলাম ভয়ে: মামুনুল
সেদিন তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় নিয়েই বিভ্রান্তির জাল তৈরি করা হয়েছে, নামের বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। আমি কেন আমিনা তাইয়্যেবা নাম লেখালাম, কেন আমিনা তাইয়্যেরা বললাম, কেন জান্নাত আরা ঝর্ণা নাম বলল এই সকল বিষয় নিয়ে অনেক অনেক কথা কথা অনেক অনেক প্রচারণা।
‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যখন এভাবে আমার ওপর আক্রমণ করে আমার ওপর চড়াও হয়ে সন্ত্রাসী দল আমার জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে প্রশ্নবাণে আমাকে জর্জরিত করছিল, আমি তাদের প্রশ্নের মুখে বলছিলাম, আমি আপনাদেরকে কেন বলব। এর পরেও তাদের মারমুখী আচরণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমি অনেক কিছুই আমাকে তখন বলতে হয়েছে।’