ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার। পণ্য আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে পণ্যবাহী এক থেকে দেড় শ ট্রাক। দেশের সীমান্তে ট্রাক ঢোকার পর মাপা হচ্ছে না চালক ও শ্রমিকদের তাপমাত্রা। নেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা।
পণ্য ট্রাকে তোলা বা নামানোর সময়ও নিরাপদ দূরত্ব মানতে দেখা যাচ্ছে না শ্রমিকদের।
ভারতীয় ট্রাকচালক রহিম মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, ওপারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু সামাজিক দূরত্ব মানতে বলা হয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ২৬ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ৯ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত দিয়ে মানুষের চলাচল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে পণ্যবাহী যান চলাচলের সুযোগ রেখেছে সরকার। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে বাংলাদেশের সীমানায় ঢোকার আগে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যানবাহনের চালক ও সহায়তাকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তবে সোনাহাট স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরকার রকিব আহম্মদ জুয়েলের দাবি, সব নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি চলমান আছে। ভারতীয় ট্রাকচালকদের তাদের সীমানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই এ দেশে পাঠানো হয়। এখানেও তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসএম সায়েম বলেন, ‘বন্দরে ভারতীয় ট্রাকচালকদের তাপমাত্রা মাপার জন্য একজন স্বাস্থ্য উপসহকারী আছেন। এ ছাড়া তাদের আলাদা থাকার নির্দেশনাও দেয়া আছে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো চালক পাওয়া যায়নি।’
একই অবস্থা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে এ দেশে আসে।
কিন্তু এ বন্দরেও পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ মানা হচ্ছে না।
দেশে আসার পর ট্রাকে কোনো জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয় না। চালক ও শ্রমিকদের করা হয় না স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা দেখা হয় না করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট।
অধিকাংশেরই নেই মুখে মাস্ক। কারো কারো কাছে মাস্ক থাকলেও তা হয় থুতনিতে পরা নয়তো পকেটে রাখা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য চালকদের বার বার বলা হলেও তারা কথা মানছেন না।
পঞ্চগড়ে প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন করোনা রোগী আছে ১৪ জন। তাদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভারতের ট্রাকচালক গোবিন্দ রায় জানান, তাদের দেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলেও এ দেশে তেমন কিছু করা হচ্ছে না।
ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক হামিদুর ইসলাম জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরে বন্দরে আছেন। ভারতে পণ্য খালাস করে আবার দেশে ফিরেছেন। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের সতর্কতা দেখেননি।
তিনি আরও জানান, বন্দরে যখন বড় কোনো কর্মকর্তা আসছেন তখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) লোকজন জীবাণুনাশক স্প্রে নিয়ে দাঁড়ায়। তারা চলে গেলেই সব বন্ধ হয়ে যায়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সদস্য ফেরদৌস আলম লিটন বলেন, ‘ভারতে এখন করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপ। যদি বন্দরে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি এভাবে উপেক্ষিত হয় তাহলে বাংলাদেশেও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।’
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর সব ধরনের চেষ্টা করছেন; মাস্ক বিতরণসহ সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত মাইকিং করছেন। কিন্তু সবসময় তো আর সবাইকে নজরে রাখা সম্ভব না।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। বার বার বলার পরেও যদি নির্দেশনা না মানা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।