টিকা রাজনীতির এক টালমাটাল সময়ে এক দিনের সফরে ঢাকা এলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই তার এ ঢাকা সফর বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, এটা হঠাৎ সফর নয়। গত নভেম্বরে এ সফর হওয়ার কথা ছিল, যা পরে স্থগিত হয়। এবার তা হচ্ছে; এটা রুটিন সফর।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টায় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বহনকারী বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে স্বাগত জানান।
সফরে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষা ও টিকা সহযোগিতার আলোচনা প্রাধান্য পাবে।
ঢাকা ক্রমেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভরকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও চীনের কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকাভিত্তিক তৎপরতা বাড়িয়েছেন। একে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ঢাকার কূটনীতিক মহল।
২২ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার জন্য ঢাকায় করোনাভাইরাসের টিকার স্টোরেজ গড়ার চীনা প্রস্তাবে সম্মতি ঘোষণা করেন। সে প্রস্তাবে নেই করোনায় বিপর্যস্ত ভারত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াও সামরিক সহযোগিতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চীন থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে সামরিক সরঞ্জামও কেনে।
বিশেষ করে ১৯৭৭ সাল থেকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য কেনা সমরাস্ত্রের বড় উৎস চীন।
নৌবাহিনীর জন্য প্রথম দুটি সাবমেরিনও কেনা হয় চীন থেকে। এ ছাড়া বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম চীন থেকে কেনা হয়েছে।
টিকা কূটনীতি
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে কেনা টিকা পাঠাতে গড়িমসি শুরু করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত সরকার। কেনা টিকার চালান ধাপে ধাপে দেয়ার কথা থাকলেও ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর সিরাম বলছে, টিকা দিতে আরও সময় লাগবে।
এমন অবস্থায় বিকল্প হিসেবে চীন থেকে টিকা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরে টিকা ইস্যুও গুরুত্ব পাবে।
ঢাকার কূটনীতিকরা মনে করেন, পরিবর্তনশীল বিশ্ব ভূরাজনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা এবং টিকা কূটনীতির এ পর্বে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির বাংলাদেশ সফর তাৎপর্যপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই এসব বিষয় এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও তা গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান এই অঞ্চলে চীনাবিরোধী ইন্দো প্যাসেফিক পরিকল্পনা বা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) জোটে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছে ঢাকাকে। যদিও বাংলাদেশ এখনও কোনো সামরিক জোটে যাওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়নি। তবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন।
দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের (বিআরআই) বড় অংশীদার বাংলাদেশ। আইপিএসের চাপে যাতে এটা চাপা না পড়ে, সে বিষয়টি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনায় তুলতে পারেন বলে মনে করছে ঢাকা।
চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি মঙ্গলবার ঢাকা সফর শেষ করে শ্রীলঙ্কা হয়ে বেইজিং ফিরতে পারেন।
২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চীনের কংগ্রেসে জেনারেল ফেঙ্গহিকে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
অতি সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি কানেকটিভিটি, সহযোগিতা জোরদার ও বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন ফলের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক চীন।
‘চীন ও বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ও ঐতিহ্যবাহী বন্ধু। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের এক গতি উপভোগ করছে; কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস জোরদার করা এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে সহযোগিতা এগিয়ে চলছে।’