গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তাণ্ডবের জড়িত ২০ ছাত্রকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জেলার আলোচিত কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া। এই ছাত্ররা সবাই দাওরায়ে হাদিস বিভাগে পড়ত।
সোমবার রাতে মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মুফতি সামছুল হক সরাইলী স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
তারা হলেন কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি আশেক এলাহি, সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ, মিছবাহ উদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, মবকুল হুসেন, রফিকুল ইসলাম, মুবারকুল্লাহ, বোরহান উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আবজাল, মো. জুবায়ের, হিজবুল্লাহ রাহমানী, জুবায়ের, শিব্বির আহমদ, ইফতেখার আদনান, সাইফুল ইসলাম, মো. সোলাইমান, রাকিব বিল্লাহ, তারেক জামিল ও কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুল্লাহ বাহার। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মুফতি সামছুল হক সরাইলী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, জামিয়ায় ভর্তির পালনীয় শর্তাবলীর ২৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা মাদ্রাসার সমুদয় রীতিনীতি ও আইন-কানুন অমান্য করে হুজুরদের বাঁধাকে উপেক্ষা করে ২৬ মার্চ বিকেলে জেলার সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়।
গত ২৬ মার্চ জামিয়া বিকালে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে স্থানীয় রেল স্টেশনে আগুন দেয় কওমি ছাত্ররা। পরে তারা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় বেশ কিছু গাড়ি ও মোটর সাইকেল। আগুন দেয়া হয় আনসার ক্যাম্পেও। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে।
২৬ মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ডে মাদ্রাসা ছাত্র হেফাজত কর্মীদের আগুনে এই দশা হয়সে সময় এই তাণ্ডবের দায় স্বীকার করেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা হেফাজত। বরং আওয়ামী লীগের নিজেদের বা তৃতীয় পক্ষের কাজ বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে।
তবে গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে হেফাজত ইসলাম একাধিকবার তাণ্ডবের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং কেন্দ্রীয় কমিটি বিলোপের এক দিন পর পুরো উল্টো বক্তব্য এল মাদ্রাসাটির পক্ষ থেকে।
তাণ্ডব অবশ্য কেবল ২৬ মার্চ নয়। পরদিনও মহাসড়ক অবরোধ করে বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। আর ২৮ মার্চের ত্রাস ছিল আরও ভয়াবহ।
২৮ মার্চ শহরে হেফাজতের তাণ্ডব ছিল আরও ভয়াবহ। সেদিন হামলা হয় সরকারি-বেসরকারি ৩৬টি স্থাপনায়সেদিন শহরের ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়। হামলা হয় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে। শহরে এমন কোনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বাদ ছিল না যেগুলোতে হামলা চালায়নি হেফাজত কর্মীরা। এমনকি ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিতে নির্মিত ভাষা চত্বরও জ্বালিয়ে দেয় তারা।
এসব ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি আসামি রয়েছে।
ওই তাণ্ডবে গত কয়েক বছরে প্রভাবশালী হয়ে উঠা হেফাজতই এখন চাপের মুখে। ২৫ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর রোববার এক ভিডিও বার্তায় এসে ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। পরে রাতেই গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি।