ভারতে করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জরুরি কাজে ঘরের বাইরে গেলে একসঙ্গে দুটো মাস্ক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অনেকেই সরকারি আদেশ অমান্য করছে উল্লেখ করে সোমবার এক বিবরণীতে বলা হয়, বাইরে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার না করলে সরকার কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিক্যাল শিক্ষা বিভাগ। আদেশ অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুল সংখ্যক মানুষকে জরিমানাও করে।
সংক্রমণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মাস্ক না পরে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
অবশ্য গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঘোষণায় এই আইন সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে বলা হয় জেলা প্রশাসক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে।
গত ২৫ অক্টোবর মাস্ক না পরলে সরকারি সেবা দেয়া হবে না বলে নির্দেশনা জারি হয়। যদিও শীতে সংক্রমণ কমে আসার পর এই বিষয় নিয়ে জনগণের মধ্যে আবার অনীহা দেখা দেয়।
তবে গত মার্চ থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকার পর সরকার স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আবার কঠোর হয়। মাস্ক না পরলে জরিমানাও করা হতে থাকে।
লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ
গত ২৯ মার্চ থেকে জনসমাগম সীমিত করে সরকার ১৩ দফা নির্দেশনা দেয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়। আর ১৪ এপ্রিল থেকে দেয়া হয় সর্বাত্মক লকডাউন।
সেদিন থেকে জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই কঠোর লকডাউন প্রথমে দেয়া হয়েছিল এক সপ্তাহের জন্য। পরে আরও দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বিধিনিষেধ, যদিও ২৫ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে খুলে দেয়া হয়েছে বিপণিবিতান।
যে কারণে লকডাউন বাড়ল
গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। সময় শেষ হওয়ার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হবে কঠোর বিধিনিষেধ।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
২৮ এপ্রিলের পর লকডাউন তুলে নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা আরও এক সপ্তাহের জন্য কন্টিনিউ করতে যাচ্ছি। এটা হলো আমাদের ডিসিশান। আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ যে, আরও এক সপ্তাহ এটাকে কন্টিনিউ করতে হবে। অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।’
ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্বে এখন এখানেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটছে। টানা পাঁচ দিন সেখানে ২৪ ঘণ্টায় তিন লাখের বেশি রোগী ধরা পড়েছে। মৃত্যুও হচ্ছে দিনে তিন হাজার ছুঁই ছুঁই।
হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারা, অক্সিজেন সংকটে শত শত রোগীর মৃত্যু, আবার সেখানে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট নামে নতুন ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়া বাংলাদেশেও আতঙ্ক তৈরি করেছে।
এই অবস্থায় করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কমিটির সুপারিশে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের অবস্থাটা এত খারাপ করেছে যে, এটা নিয়ে আমরা খুব ভয় পাচ্ছি। এটা যদি বাংলাদেশের চলে আসে...ইতোমধ্যে যশোরে দুজন পাওয়া গেছে। এ কারণে এটা আমাদের সাবধানতা, আমাদের ডিসিশান।’
দোকান খোলা রাত আটটা পর্যন্ত
শুরুতে সিদ্ধান্ত হয় দোকান খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ আরও চার ঘণ্টা সময় দিয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার সুযোগ দেয়।
তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, লকডাউনে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে।