বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বায়তুল মোকাররমে সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে কওমিপন্থিদের সংঘর্ষ চলাকালে হেফাজত নেতা মামুনুল হক পুলিশ কর্মকর্তার ফোন পেয়ে বায়তুল মোকাররমে যান বলে আদালতে দাবি করেছেন।
সেই সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলা এবং ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে এ কথা বলেন হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পরদিন মোহাম্মদপুরে সহিংসতার এক মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে শেষে সোমবার মামুনুলকে এই দুটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম সাদবির আহসান চৌধুরীর আদালতে শুনানি চলাকালে মামুনুলকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনার কিছু বলার আছে কি না।’
তখন তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের ঘটনার দিন আমি বাংলাবাজার মসজিদে ইমামতি করছিলাম। নামাজের পর আমি মসজিদেই বসে ছিলাম। এমন সময় পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বলেন, “মামুনুল হক সাহেব, আমরা তো বিপদে আছি। বায়তুল মোকাররমে আপনাদের কর্মীদের সাথে আমাদের পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। মসজিদের ভেতরে আপনাদের অনেকে আটকা আছে। আপনি যদি সেখানে যেতেন তাহলে ভালো হতো।” আমি তার অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে যাই এবং সেখানে গিয়ে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে শান্ত করি।’
সাত দিনের রিমান্ড শেষে মামুনুল হককে ২৬ মার্চ সংঘর্ষ ও ২০১৩ সালের ৫ মের সহিংসতার মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে যা হয়েছে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধিতা করে আসছিল হেফাজত। তবে সফরের চার দিন আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি বলে, তারা মোদির আগমনের বিরোধী হলেও রাজপথে তাদের কর্মসূচি থাকবে না।
তবে ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমে এক সমাবেশে মামুনুল হক বলেন, মোদি দেশে এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। আর সফরের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা।
ঘটনার শুরু হয় বায়তুল মোকাররম এলাকায়। সেদিন জুমার নামাজের পর কওমিপন্থিরা সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সেটি চলে আসরের নামাজ পর্যন্ত।
২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের পর হেফাজত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক সহিংস হয়ে ওঠেএই সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ব্যাপক সহিংসতা চালায় হেফাজত কর্মীরা। সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনার পাশাপাশি হামলা হয় থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। গুলিতে নিহত হয় পাঁচ ব্যক্তি।
এরপর দুই দিন আরও বেশি সহিংস হয়ে ওঠে হেফাজত। বিশেষ করে ২৮ মার্চের তাণ্ডব ছিল ভীতি-জাগানিয়া। সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বলতে গেলে তছনছ করে দেয় তারা। সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের পাশাপাাশি আগুনের পর হতবিহ্বল হয়ে পড়ে শহরবাসী।
সেদিন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জেও ত্রাস সৃষ্টি করে হেফাজত কর্মীরা। ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর তাকে উদ্ধার করতে গিয়েও ব্যাপক সহিংসতা চালায় হেফাজত কর্মীরা।
কেবল রিসোর্ট নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ছাত্র ও যুবলীগ নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মহাসড়কের যানবাহন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও সুনামগঞ্জের ছাতকে ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ে চলে বেপরোয়া হামলা।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একের পর এক হামলার পর ১১ এপ্রিল থেকে হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হয়পরদিন হেফাজতকে সতর্ক করে দিয়ে এক সপ্তাহ পর সরকার শুরু করে অভিযান। এর মধ্যে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় মামলার আসামি করা হয় মামুনুলকে।
২৫ শীর্ষস্থানীয় নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৫ এপ্রিল রাতে হঠাৎ করেই জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে গভীর রাতে প্রথমে তিন সদস্যের ও পরে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।