রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানায় করা দুটি মামলায় হেফাজতে ইসলামের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন।
বিচারক ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা মামলায় ৩ দিন এবং মোদিবিরোধী আন্দোলনের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনায় পল্টন থানার করা মামলায় মামুনুলকে ৪ দিনের হেফাজতে নেয়ার আদেশ দেন।
পুলিশ দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় মামুনুলকে আদালতে তোলা হয়।
আগের দিন রোববার শাপলা চত্বরের মামলায় মামুনুলকে ১০ দিন হেফাজতে রাখার আবেদন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আদালতের মতিঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার এক সদস্য।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুল হককে আদালতে হাজির করে পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন।
এ সময় মামুনুলের পক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেসবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। তখন আরও কয়েকজন আইনজীবী তার সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা এবং রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
তিনি শুনানিতে বলেন, মামুনুল দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফরের ভয়াবহ তথ্য প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। তাই তাকে জামিন দেয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাকে দুই মামলায় ২০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয়া হোক।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত কয়েক বছরে তুমুল আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুলকে গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও পরে আরও অনেক মামলা পাওয়া যায় তার নামে।
গ্রেপ্তারের পরের দিন মামুনুলকে আদালতে তোলা হয়। বেআইনি সমাবেশ, পুলিশকে মারধর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির অভিযোগে করা সেই মামলায় সাত দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় পুলিশ।
মহানগর আদালতের হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী রিমান্ডের আদেশ দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুলের ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক নারী সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
এই সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয় সোমবার। তার আগের দিনই নতুন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নতুন যে মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে, সেটি আট বছর আগের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িতদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধের ডাক দেয় হেফাজত।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও হঠাৎ করে সংগঠনটি শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আর তারা বিকেলে সেখানে জড়ো হওয়ার পর সেখান থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে তারা সরকার পতনের দাবি করতে থাকে।
দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় হেফাজত কর্মীরা। মামুনুল হক ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে পরদিন থেকে নতুন সরকারের ঘোষণা দেন।
সেই সমাবেশকে ঘিরে হেফাজত সে সময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল বলে হেফাজতের গ্রেপ্তার এক নেতা আদালতে জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিএনপির এক নেতা তাদের পাঁচ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সেই নেতা হলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।
যদিও হেফাজতের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।