বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাউন্সিলরকে বিয়ে করার হুমকি অতঃপর...

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০১:৪৫

‘বিয়ে করার জন্য আপা তাকে হুমকি দিয়েছে এসব কথা বলছেন। তাকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি মহাপুরুষ যে তাকে বিয়ে করার জন্য হুমকি দিবে। আর তার বাসার সামনে লোকজনও যায়নি। আপা দেশে থাকলে খোরশেদের মিথ্যা কথার জবাব দিতে পারতেন।’

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দাফন করে আলোচিত নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ফেসবুকে লাইভে এসে এক নারীর বিরুদ্ধে হেনস্তার যে অভিযোগ তুলেছেন তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তার স্বজনেরা।নিউজবাংলাকে ওই নারীর ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে আপা বর্তমানে দুবাই আছেন। দেশে থাকলে তিনিই এই মিথ্যাচারের জবাব দিতেন।’ শনিবার রাতে স্বস্ত্রীক ফেসবুক লাইভে আসেন খোরশেদ। এক নারীর দ্বারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন দাবি করে কেঁদে ফেলেন তিনি। ওই নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে খোরশেদ বলেন, ‘তার নাম সাইদা আক্তার। এরই মধ্যে তার তিনটি বিয়ে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গে তার পরিচয় আছে। তিনি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিভিন্ন স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।’কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘আমি করোনার শুরু থেকেই আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন-সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে একপর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন, তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনা মূল্যে। এ সময় একটি সংবাদের নিচে এ নারী কমেন্ট করে তিনি অক্সিজেন দিতে চায় এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেকটেড হয় এবং কথা বলা শুরু করে।‘একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটিপড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এ রকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে ওই নারী আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং আমার পেছনে ওঠেপড়ে লাগে।’তিনি বলেন, ‘একবার ওই নারী আমাকে বিয়ে করবে ঠিক করে গাড়ি নিয়ে কাজি নিয়ে আমার বাড়িতে আসে আমাকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। সে আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছে, তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে সবাই তার কূটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছে।’খোরশেদ বলেন, ‘সম্মানকে ভয় পাই বলেই এত দিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ-সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছে এবং হত্যার কথাও জানাচ্ছে ওই নারী। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী ও সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং অবহিত করেছি। বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পরপরই তাদের অবহিত করা হয়।’এসব অভিযোগের বিষয়ে সাইদা আক্তারের ভাই বলেন, ‘তিনি (খোরশেদ) আমার মেজো ভাইয়ের বন্ধু। সেই সুবাদে অনেক আগে থেকে তিনি আমাদের পরিচিত। করোনার সময় তিনি অনুদান হিসেবে অক্সিজেন নিয়ে গেছেন। এরপর তার লোকজনও নিয়ে গেছে। ‘রোববার সকালে দেখি ফেসবুকে খোরশেদ আপাকে নিয়ে নানা মিথ্যা মন্তব্য করছেন। বিয়ে করার জন্য আপা তাকে হুমকি দিয়েছে এসব কথা বলছেন। তাকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি মহাপুরুষ যে তাকে বিয়ে করার জন্য হুমকি দিবে। আর তার বাসার সামনে লোকজনও যায়নি। আপা দেশে থাকলে খোরশেদের মিথ্যা কথার জবাব দিতে পারতেন।’নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাইদার ছেলে বলেন, ‘কাউন্সিলর খোরশেদের বাসায় গিয়েছি। সেখানে তার সাথে কথা বলেছি। তিনি যেসব অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা।’

তবে নিউজবাংলার কাছে রোববার বিকেলে এক প্রতিক্রিয়ায় খোরশেদ দাবি করেন, ‘ওই নারী প্রথমে হাদিস নিয়ে নানা আলোচনা করেন। এরপর বলেন, আমার কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু আমাকে সময় দেয়ার মানুষ নেই।‘তারপর তিনি নানা কৌশলে ফাঁদ তৈরি করেন। আমি তা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করি। এ জন্য সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ওই নারী আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। সে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ক্ষতি করতে চায়।’ এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউন্সিলর খোরশেদ যেসব অভিযোগ করেছেন পুলিশ সে বিষয়ে তদন্ত করছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কে এই সাইদা আক্তারসাইদা আক্তারের পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায়। বাবার নাম মৃত জহিরুল ইসলাম। জহিরুলের ১০ সন্তানের মধ্যে সাইদা তৃতীয়।

নির্মাণাধীন এই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন সাইদা।

শহরের চানমারি এলাকায় বাড়ি করেছেন সাইদা। ৯ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। নির্মাণাধীন ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে।রোববার সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে গিয়ে সাইদাকে পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয় তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি থাকেন ভবনের দ্বিতীয় তলায়।সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন। এর মধ্যে সাইদা তৃতীয়। ২০১৬ সালে তিনি (সাইদা) তারেকুর রহমান স্বপন নামে একজনকে বিয়ে করেন। এর আগে তিনি আরও দুইজনকে বিয়ে করেছিলেন। ‘আপার ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা আছে। আগে তার তেলের ব্যবসা ছিল। ব্যবসার কাজে তিনি বর্তমানে দুবাই আছেন।’মোবাইল ফোনে নিউজবাংলার কথা হয় তারেকুর রহমান স্বপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু সে কোথাও প্রকাশ করেনি আমি তার স্বামী। ‘সাইদা তার প্রথম স্বামীসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়া হয়। ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমি ও আমার মা রুফিয়া বেগমের নামে মামলা করে সে। এজাহারে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আমাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এখন পর্যন্ত সেই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর