বৈশাখের অনেকটা সময় চলে গেলেও বৃষ্টির দেখা নেই। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রোববার আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপে পুড়ল রাজধানী ঢাকা, ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খরতাপ চলছে দেশজুড়েই। রোববার দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে, ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সাত বছরের মধ্যে এতবেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়নি দেশে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো (প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি) অবস্থার কারণে এবার বৃষ্টি কম হচ্ছে।
চলতি এপ্রিলই নয়, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থাকে অস্বাভাবিক দেখছেন আবহাওয়াবিদরাও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এপ্রিল মাসে ১৩০ মিলি মিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে বৃষ্টি কমই হয়েছে।
মার্চে দেশে গড়ে ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১০ মিলিমিটার, অন্য বছরের তুলনায় ৭৯.৬ শতাংশ কম। আর ফেব্রুয়ারিতে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টি হয়েছে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ কম।
কী কারণে বৃষ্টি কম হচ্ছে, জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতায় আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে এবার বৃষ্টি কম হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’ অবস্থা চলছিল, এই অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। এটাও কম বৃষ্টির কারণ।
‘এ ছাড়া সারা পৃথিবীর জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশেও উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ রকম আরও বহুবিধ কারণে বছরের শুরু থেকে বৃষ্টি কম হচ্ছে।’
এ রকম অতীতে কবে হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার স্মৃতিতে নেই। তবে যে সকল বছরে লা লিনা ছিল তখনই বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। আমরা আশা করি, চলতি মাসের শেষে অর্থ্যাৎ চলতি মাসের ২৮ তারিখ বা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত দেখতে পাব। এটা আমরা বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুসারে বলছি। তবে এটি আরও পিছিয়েও যেতে পারে।’
আব্দুল মান্নান জানালেন, চলমান দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে সোমবার ও মঙ্গলবারও। বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, চলমান আবহাওয়ায় এতে তো কৃষির অনেক ক্ষতি হচ্ছেই। মাটিতে জলীয় বাষ্পের ঘাটতি দেখা দেয়ার কারণে অর্থাৎ খরা থাকার কারণে যে সকল কৃষি ফসল মাঠে আছে তার ফলনের পরিমাণে প্রভাব পরতে পারে। কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি সফলের পর আরও একটি ফসল ফলনে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে চলতি মাসের শেষ দুই দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানালেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এপ্রিল মাসের ২৯-৩০ তারিখের দিকে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’
চলতি মাসে কতটুকু বৃষ্টি হয়েছে এটা মাস শেষে হিসাবের পর বলা যাবে বলে জানালেন হাফিজুর। বলেন, ‘চলতি এপ্রিল মাসে সারা দেশে গড়ে ১৩০ মিলি মিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। তবে তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে।’