পুলিশ কারণ ছাড়া শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বাড়ি পরিদর্শন করে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সরকার যেমন সবার মুখ বন্ধ রাখতে চাচ্ছে, ঠিক সেভাবে পুলিশের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কারণে পুলিশের প্রকৃত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই কথা স্পষ্ট পুলিশ বিনা কারণে গুলি চালিয়েছে, কারণ পুলিশ ভয়ে ছিল।’
১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে সেদিন পাঁচজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৫০ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
গুলির সময় পুলিশের সঙ্গে হেলমেট বাহিনী ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে কারা এই হেলমেট বাহিনী, সেটি স্পষ্ট করে বলেননি জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আপনারা শিল্প কারখানা করেন সমস্যা নাই। তবে মালিক পক্ষের কাছে শ্রমিকদের বার্তা পৌঁছায়নি। কারণ সরাসরি মালিক শ্রমিক কাজ হচ্ছে না। এখানে মিডলম্যান আছে। সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত। আপনারা (মালিকরা) আরও একটু সচেতন হলে প্রাণহানি ঘটত না।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমাদের এভাবে জীবন দিতে হয়, এটা দুঃখজনক। এটার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা খুশি হতাম যদি একজন বিচারপতি এখানে সরেজমিনে এসে দেখতেন। অন্তত ভবিষ্যতে শ্রমিকদের আর মৃত্যু হবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া হোক। জানাজা পড়ার টাকা না। ন্যূনতম দাবি হবে ৫০ লাখ টাকা। একটা ১৮ বছরের ছেলের আরও ৪০ বছরের কর্মজীবন ছিল। আমরা আরও চাই কী, এই যে মা আছেন, ভাই আছেন, তাদেরকে সরকারের আজীবন দেখা শোনা করুক।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে ঘটনা ঘটেছে। তাই বলি এটা নতুন না। বারবার ঘটছে। তাদের (মালিক) নীরবতা দেখে বুঝি। তারা যত্নবান ছিলেন না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাথরুমটা ঠিক করেন, মার্চ মাসের বেতন দেন, এই রকম দাবির জন্য গুলি হয়, এটা আমরা ভাবতেও পারি না। শ্রমিকদের বিক্ষোভ হলো, কেন গুলি চলল?’
বাঁশখালী এসেই দুপুরে জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ পরিদর্শন দলের সদস্যরা প্রথমে গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের চিফ কো অর্ডিনেটর ফারুক আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তার সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
এ সময় আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবির এবং বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবীরসহ পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, শাহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাছির, মোজ্জাফর আহমদ, ছৈয়দুল আলম, ফরিদ আহমদ, মোহাম্মদ হাশেম, হাসান মারুফ, সেলিম নুরসহ অনেকে।