পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, একটি ঘটনা ঘটলেই এর কারণ অনুসন্ধানে অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়, আরমানিটোলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হবে কতটা?
সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কি কোনোই মূল্য নেই প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও কেন রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানো গেল না? স্থায়ী রাসায়নিক পল্লি কেন প্রস্তুত হলো না? লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকার পরেও কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ব্যবসা চলছে? এমন সব প্রশ্ন আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
‘কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ করতেও ভয় হচ্ছে। কেননা নিমতলী, চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তের জায়গাই পরিবর্তন হয়েছে চারবার। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর শুধু পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার চূড়ান্ত উদহারণই নয় বরং দিন দিন প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নিমতলীর তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে জরুরিভিত্তিতে।
টিআইবি মনে করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সমন্বয়হীনতা, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতাই পুরান ঢাকায় মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ; নিমতলী ও চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পরও বোধোদয় ঘটেনি।
বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবে নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়িত না হওয়া এবং নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় আরমানিটোলার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে টিআইবি।
নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর উচ্চ আদালত পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেন সরিয়ে ফেলা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিলেও ১১ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে কোনো জবাব দেয়া হয়নি উল্লেখ করে জামান বলেন, ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করার পাশাপাশি আদালত অবমাননাও করেছে।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার সুযোগে কতিপয় মহল অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটি অসাধু ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।’
আরমানিটোলার ঘটনাসহ নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদি অবকাশ দিয়ে স্থানান্তর; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা নিষিদ্ধ; সরকারিভাবে নির্মাণাধীন অস্থায়ী গুদাম প্রকল্প ও স্থায়ী রাসায়নিক পল্লি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সব রাসায়নিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক স্থানাস্তর করার জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।