বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না অটোরিকশা

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ২০:৩১

‘আমাদের প্রত্যেকটা অফিসার গাড়ি আটকানো ও মামলা দিতে দিতে ক্লান্ত। গত সপ্তাহের শুরু থেকে গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মামলা-জরিমানায় তা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।’

‘সর্বাত্মক’ লকডাউন চলাকালে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। কিন্তু চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। চেকপোস্টগুলোতে একের পর এক মামলা দিয়েও যানবাহনগুলোর সড়কে নামা ঠেকাতে পারছে না পুলিশ।

মুভমেন্ট পাস বা জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হতে গিয়ে যেসব সিএনজি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো ‘মানবিক’ কারণে ছাড় পায়। বাকি যেসব গাড়ি খালি থাকে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে, সেগুলোকে মামলা দেয়ার মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে।

চালকরা জানান, মামলা কোনো বিষয় না। রাস্তায় বের হওয়ার কারণে কোনো মামলা হলে সেই টাকা মালিক দেয়। আর চালকের লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা থাকলে সেই টাকা দেয় চালক।

১৫ থেকে ২০টি অটোরিকশা রয়েছে এমন মালিকের সংখ্যা অনেক। লকডাউন শুরুর দিকে মালিকরা গাড়ি বের করতে দিত না। এতে চালকদের আয় বন্ধ হয়, সঙ্গে মালিকেরও।

সরকারের আদেশ মেনে শুধু শুধু সিএনজি গ্যারেজে বসিয়ে না রেখে রাস্তায় থাকলেই লাভ দেখছেন মালিক-চালকরা। এক মালিকের ১৫টি গাড়ি রাস্তায় নামলে দিনে মামলা হচ্ছে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারটির বিরুদ্ধে। এগুলোর টাকা পরিশোধ করলেও ১৫টি গাড়ি থেকে যে পরিমাণ জমার টাকা পাওয়া যায় তাতে লাভের অংশটাই বেশি থাকে।

রাজধানীর পুলিশের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, গত তিন-চার দিনে রাস্তায় সিএনজির সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি আদেশ অমান্য করে রাস্তায় নামার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে, রেকার করা হচ্ছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে সিএনজিতে করে যাচ্ছে এমন যাত্রী থাকলে চালকদের কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চালকদের আকুতির কারণে ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ।

সংসার চালানোর তাগিদেই গত দুইদিন ধরে অটো নিয়ে নেমেছেন বলে জানান চালক শহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজয় স্মরণী এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে রাস্তায় নামি না। রোজগার নাই, পেট চলবো কেমনে? কালকে থাইক্যা সিএনজি নিয়ে বাইর হইছি। দুই জায়গায় পুলিশ ধরছিল, পরে ছাইড়া দিছে।’

রাস্তায় বের হওয়ার কারণে মামলা হলে সেই মামলার টাকা গাড়ির মালিক বহন করে বলে জানান চালক কায়সার। বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণে কোনো মামলা হলে ওইটার টাকা আমি দিই। এ ছাড়া যত মামলা অয় তা মালিক দেয়।’

মালিবাগ চৌধুরীপাড়া বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন। তিনি কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক।

তিনি বলেন, ‘লকডাউন শুরুর পর প্রথম দিকে আমরা গাড়ি বের হতে দেইনি। পরে দেখি কিছু কিছু গাড়ি চলছে। ড্রাইভাররাও চাইতেছিল গাড়ি বের করতে। সেজন্য অল্পসংখ্যক গাড়ি গ্যারেজ থেকে দেয়া হচ্ছে।’

দিনভর মামলা দিয়েও অটোরিকশা ঠেকানো হচ্ছে না বলে জানান রাসেল স্কয়ার এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট জ্যোতি মাহমুদ স্ট্যালিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা অফিসার গাড়ি আটকানো ও মামলা দিতে দিতে ক্লান্ত। গত সপ্তাহের শুরু থেকে গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মামলা-জরিমানায় তা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিন এত এত মানুষ মুভমেন্ট পাস নিচ্ছে। তারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হচ্ছে, ফলে রাস্তায় গাড়ি বাড়ছে। একদিকে বের হওয়ার জন্য পাস দেয়া হচ্ছে অন্যদিকে আবার আটকানোর জন্য বলা হচ্ছে। আমরা আছি বিপদে!’

জরুরি চলাচলের জন্য যারা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও বের হবেন তাদের জন্য মুভমেন্ট পাস এর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। গত ১৩ এপ্রিল https://movementpass.police.gov.bd/ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে আজ ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস নিয়েছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৮ জন। এই হিসাব অনুযায়ী, গত সাত দিনে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ করে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হয়েছে।

মার্চের শেষ দিকে এসে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল সাত দিন বিধিনিষেধ আরোপ করে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।

শুরুতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পরে মহানগরগুলোতে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। শেষ দিকে এসে সময় বেঁধে দিয়ে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত আসে।

পরে সরকারের সেই সিদ্ধান্ত আরও দুদিনের জন্য বাড়ানো হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধসহ লকডাউন আরোপ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ায় সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর