বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিস্তীর্ণ হাওরে তৃষ্ণা মেটানোর নলকূপ

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:৫৯

বিস্তীর্ণ হাওরে কৃষকের তৃষ্ণা নিবারণের উপায় নেই। সেই কষ্ট দূর করেছেন স্থানীয় এক কৃষক। দুটি নলকূপ বসিয়েছেন তিনি শুধু কৃষকদের পানি পানের জন্যে।

বৈশাখ মানেই হাওরে ধান কাটার ধুম। মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উৎসবে ব্যস্ত সময় পার করেন হাওরের মানুষ। মাসজুড়ে ধান কাটা, মাড়াই ও সিদ্ধ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কৃষকেরা। আর এ কারণেই এ মাসের পুরো সময়টা ভোর হওয়া থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত তারা থাকেন হাওর অথবা ধান মাড়াইয়ের মাঠে।

অনেকে সারা দিনে একবারও বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান না। সে জন্য খাওয়া-দাওয়াও সারতে হয় হাওরে। দিনভর পরিশ্রম শেষে বিশ্রাম নিতে কোনো ছায়া নেই কোথাও।

হাওরে গাছ নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে বিচ্ছিন্ন কিছু হিজল গাছ। প্রখর রোদে গাছগুলোর নিচে বিশ্রাম নেন ক্লান্ত কৃষকেরা। তবে খাওয়া শেষে নিরাপদ পানি পান করার সুবিধা নেই কোথাও।

এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ছিলনীতে বিস্তীর্ণ হাওরে দুটি নলকূপ স্থাপন করেছেন এক কৃষক। আর এ কাজটি করে কৃষকদের কাছে প্রশংসার পাত্র হয়েছেন তিনি।

স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিকেরাও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওই কৃষকের প্রতি।

আগে হাওরে কাজ করা কৃষকদের খাবারের পানি বোতলে কিংবা কলসে করে নিয়ে আসতে হতো বাড়ি থেকে। নদী বা খালের পানি পান করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু ছিলনী গ্রামের শাপলা এবং পাতলামোরা হাওরে এ দুটি নলকূপ স্থাপন হওয়ায় এখন নিরাপদ ও সুপেয় পানি পান করতে পারছেন তারা। এখন বাড়ি থেকে কলস বা বোতল ভরে পানিও আনতে হয় না।

সিরাজগঞ্জ থেকে ধান কাটতে আসা হারুন মিয়া জানান, গত বছরও এই হাওরে ধান কাটতে এসেছিলেন তিনি। সকালে ও দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর পানি আনতে কলস দিয়ে একজন মাল্লাকে (শ্রমিক) গ্রামে পাঠাতে হতো। গ্রাম থেকে কলসে করে পানি আনতে লেগে যেত এক থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এবার হাওরের মধ্যেই নলকূপ থাকায় একজন শ্রমিকের সে সময়টা নষ্ট হচ্ছে না।

স্থানীয় আরেক শ্রমিক আবু ছালেক। ১৬ বছর ধরে প্রতি বৈশাখে তিনি ধান কাটেন। বিগত বছরগুলোতে খাবারের পর পানি পান করার জন্য সবসময়ই বোতলে বা কলসে করে নিয়ে আসতেন তিনি। বিকল্প হিসেবে নদী বা খালের পানি পান করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

তিনি বলেন, ‘বন্দের মাইঝে এই রহম একটা সুবিধা পাইয়া আমরার লাগি অনেক সুবিধা অইছে। নাইলে আমার জোগালের একজনরে সবসময়ই হানি (পানি) আননের লাইগ্যেই বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে পাঠানি লাগদো। বাড়িত থাইক্যে হানি লইয়া হাওরে আইতে আইতে আবার পানি গরম অইয়া যাইতোগা।

‘অহন এই দুই হাওরে দুইডা কল বওয়ানির পর থাইক্যে আমরা ঠান্ডা হানি খাইতাম ফারি। আর কল থাইক্যে তুইল্লে যহন তহনের হানিডা কাইলে পরানডা জুরাইয়া যায়গা। এই ভালো কামডা যেই বেডা করছে, মন থাইক্যে এই বেডার লাগি দোয়া করি।’

ছিলনী গ্রামের রোহান মিয়া থাকেন ঢাকায়। শাপলা হাওরে সারা বছরে খোরাকের জন্য ১ একর জমিতে আবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গত চৈত্র মাসে ডাহাত্তে (ঢাকা থেকে) বাড়িতে আইছি। বন্দে গেছিলাম ক্ষেতটা দেখতাম। গরমে দেহি হানি তিরাসে যে ধরছে। মনে অয় হানি তিরাসে জানডা শেষ। আতকা দেহি সড়কের বাজুত (পাশে) একটা কল।

‘পরে এই কলের হানিডা খাইছি পরে দেহি জানডা কইত্তো (কোথা থেকে যেন) আইছে। বন্দের মাইঝে এই কলডি থাহনে অহন ঠান্ডা হানি খাওনের লাগি বাড়িত যাওনের আর দরহার ফড়ে না। যেইবালা মন চায় এইবালাই ঠান্ডা হানি খাইতাম ফারি।’

সবাই যার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছেন, তিনি ছিলনী গ্রামের ৬২ বছর বয়সী ফরিদ মিয়া। তিনি নিজেও কৃষক। কৃষি কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর