মোমবাতি প্রজ্বালনে আট বছর আগে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করলেন স্বজন, সহকর্মী আর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সেই সঙ্গে এই দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি আর সবার ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হলো কর্মসূচিতে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাস স্ট্যান্ডে বিধ্বস্ত রানা প্লাজার অস্থায়ী বেদীর সামনে এই কর্মসূচি পালন হয়।
এ সময় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চারপাশ। নিহত শ্রমিকদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়ার আয়োজনও করা হয়।
নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জানায়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আট বছর পার হয়ে গেলে সব পরিবার ও আহততের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি।
এই ঘটনায় সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে বলা হয়, এটাকে দুর্ঘটনা বললে ভুল হবে, এটা একটি হত্যাকাণ্ড।
ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রয়োজনীয় সহায়তা, পুনর্বাসন এবং আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রদানেরও আহ্বান জানান তারা।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘রানা প্লাজার এই ভবনে শুধু রানার কারখানাই ছিল না। এখানে আর কয়েকজন মালিকের কারখানা ছিল। সেই কারখানাগুলোর মালিকরা কৌশলে সব রানার ওপর ফেলে দিয়েছে।
‘এখন রানা জেলে বাকি মালিকরা অনায়াসে বিভিন্ন স্থানে কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজনসহ অনেকই।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে দশ তলা রানা প্লাজা ধসে পড়লে অন্তত ১ হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। হতাহতদের অধিকাংশই ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।
ওই ঘটনায় পরদিনই সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। পাঁচ দিন পর বেনাপোল সীমান্ত থেকে সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
তদন্ত শেষে এ মামলায় সোহেল রানাসহ ৩৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তবে কোনো একটি মামলাতেও রায় আসেনি।
মোমবাতি প্রজ্বালনে মামলাগুলোর রায় না হওয়ার সমালোচনা করে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার দাবিও জানানো হয়।
অবশ্য সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় ২০১৭ সালে সোহেল রানার তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় আসামি ছিলেন সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেকও। গত বছরের জুনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।