বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিয়ামের গায়ে ব্লেডের জখম, অপহরণে ‘চেনা কেউ’

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:২১

‘এদের কাউকে আমি চিনতে পারি নাই। ওদের চারজনের মধ্যে একজন আমাকে চিনতে পেরেছে এবং ওরা রাতভর আসলে ঘুরছে। হঠাৎ আমি একটু শুনতে পারি যে, আরে আমরা তো কেরানিগঞ্জ চলে আসলাম।…, আমাকে নামিয়ে বলেছে, ওই তালগাছগুলার পাশে আমাকে বলছে যে, এখানে বসে থাকবি। ১০ মিনিট পর এখান থেকে উঠবি। না হলে গুলি করে দেব।’

সাংবাদিক ও বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সিয়াম সারোয়ার জামিল উদ্ধারের পর জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে চার জন মিলে অপহরণ করেছিল। এরপর একটি গাড়িতে করে সারাক্ষণ ঘোরানো হয়।

তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আর নামানোর সময় বলা হয়েছে ১০ মিনিট বসে থাকতে। নইলে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়।

এই সাংবাদিকের গা ব্লেড দিয়ে অসংখ্যবার কাটা হয়েছে। তাকে প্রাথমিকভাবে দেখা ধামরাই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেছেন, তার অবস্থা ভালো না। তাকে চেতনানাশকও খাওয়ানো হয়েছে।

যারা অপহরণ করেছে, তাদের একজন তাকে চিনতেন, এটা মনে হয়েছে সিয়ামের। তবে তিনি কে, সেটা ধারণা নেই।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর সিয়ামের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। শুক্রবার দুপুরে তেজগাঁও থানায় তার স্ত্রী শারমীন সুলতানা সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে তিনি লেখেন, সিয়াম বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে রাজধানী বনানীর বিটিসিএল কলোনীর বাসা থেকে বের হয়ে পশ্চিম নাখাল পাড়া বড়বোনের বাসায় যান। সেখান থেকে সকাল ১০ টার দিকে বের হন। তারপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নিরিবিলি এলাকায় মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজের পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে খুঁজে পান স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি মো. জাহাঙ্গীর।

সিয়াম তাকে হাতের বাঁধন খুলে দেয়ার অনুরোধ করে নিজের পেশাগত পরিচয় দেন। পরে জাহাঙ্গীর তার পরিচিত স্থানীয় সাংবাদিক মো. ইয়াসিমকে ডেকে আনেন। তিনি এসে সব শোনেন, আর সিয়ামকে কথা বলিয়ে দেন স্বজনদের সঙ্গে।

যেভাবে অপহরণ

সিয়াম বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার সময় আমিনবাজার ব্রিজের পাশে ফাঁকা জায়গাটায় আমি হাঁটছিলাম। ওই সময়কালে আমার হাতের ফোনসহ একজন টেনে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আরও দুজন পেছন থেকে আমাকে ধরে এবং ওই পরিস্থিতিতে আমাকে জোরপূর্বক মাটিতে ফেলে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরে চোখও বেঁধে দেয়।’

সিয়ামকে হাত বাঁধা অবস্থায় খুঁজে পান এক কাঠমিস্ত্রি। পরে তিনি ডেকে আনেন এক সাংবাদিককে

এ সময় একটা গাড়ি আসে, সেই গাড়িতে উঠিয়ে নেয়া হয় এই গণমাধ্যমকর্মীকে। সেটি কী ধরনের গাড়ি, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার।

বলেন, ‘তারপরে ওইখান থেকে রাতে ওই গাড়িতেই রেখে দেয়া হয়েছিল আমাকে। সেইখানে আমাকে এক বেলা খাবার দেয়া হয়েছে।’

আমাকে চেনে কেউ একজন ছিলেন

পুরো সময়টায় একটি ‘মোটামুটি উচ্চশিক্ষিত’ লোকের উপস্থিতি টের পেয়েছেন সিয়াম। জানান, তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা উচ্চারণ করেন। তিনি তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন।

সিয়াম বলেন, ‘আমি যেটুকু সিওর সে লং টাইম ধরে আমাকে চেনে এ রকম একজন ব্যক্তি ছিল এবং তার কথায় ফেনী, নোয়াখালী বা চাটগাইয়া উচ্চারণটা ছিল।’

কাউকে চিনতে পেরেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এদের কাউকে আমি চিনতে পারি নাই। ওদের চারজনের মধ্যে একজন আমাকে চিনতে করতে পেরেছে এবং ওরা রাতভর আসলে ঘুরছে। হঠাৎ আমি একটু শুনতে পারি যে, আরে আমরা তো কেরানিগঞ্জ চলে আসলাম।’

সিয়ামের ধারণা, আলম নগরের পাশ দিয়ে শামলাপুর দিয়ে যে কেরানিগঞ্জের রাস্তাটা গেছে, সেদিক দিয়ে তারা ঢুকেছেন। পরে সেখান থেকে এসে আবার ঘুরিয়ে শেষে হাফিজ উদ্দিন কলেজের (আশুলিয়ার নিরিবিলি) নির্জন গলিতে ছেড়ে দেয়া হয়।

১০ মিনিট উঠবি না, না হলে গুলি

সিয়াম জানান, গাড়ি থেকে নামানোর সময় তাকে বসে থাকতে বলা হয়েছে।

বলেন, ‘আমাকে বলেছে, ওই তালগাছগুলার পাশে বসে থাকবি। ১০ মিনিট পর এখান থেকে উঠবি। না হলে গুলি করে দেব।’

হাত ছাড়াও গায়ের বিভিন্ন এলাকায় ব্লেড দিয়ে এভাবে আঘাত করা হয়েছে সিয়ামকে, খাওয়ানো হয়েছে চেতনানাশক

এরপর কী করেছেন, সেটি তুলে ধরে সিয়াম বলেন, ‘আমি ১০ মিনিট শুয়ে ছিলাম। তারপরে ওখান থেকে উঠে হাঁটতে শুরু করি। হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পরে একজন সহৃদয়ের মানুষ আমাকে সাহায্য করেন। আমার হাতের বাঁধন খুলে দেন।’

পরে সেই ব্যক্তি পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখে জানান, যারা তাকে নিয়ে এসেছিলেন কেউই নেই। এরপর অনেকটা নির্ভার হন সিয়াম।

তখন বাসায় কল দেন এই গণমাধ্যম ও বাম অধিকারকর্মী। বলেন, ‘তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার বন্ধুবান্ধব ও লোকাল ভাই ব্রাদার যারা আছেন তারা ছুটে আসেন।’

ওরা ছিল ৪-৫ জন

সিয়াম জানান, তাকে যারা অপহরণ করেছিল, তারা চার থেকে পাঁচ জন ছিলেন। মোবাইল ছিনতাইয়ের পর পেছন থেকে দুইজন আক্রমণ করে। আর গাড়িতে ছিলেন একজন।

কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল কি না বলেন, ‘আমি আরটিভিতে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। আমি এখন নেপালভিত্তিক কাঠমান্ডু ট্রিবিউনে কাজ করি। এই পরিস্থিতিতে লিগ্যালি আমার সঙ্গে আসলে রেগুলার কনভারসেশনে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’

সিয়াম বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এক সময় তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি।

যে চিকিৎসক সিয়ামকে দেখেছেন, তিনি জানিয়েছেন, তার অবস্থা ভালো নয় মোটেও

সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল বলে জানান। তবে এ কারণে এই অপহরণের মতো ঘটনা ঘটবে বলে বিশ্বাস করেন না তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় ছাত্র রাজনীতি করেছি। ফলে সেই পারপাসে হতে পারে।’

উদ্ধারকারী দুই জন কী বলছেন?

উদ্ধারকারী কাঠমিস্ত্রী মো. জাহাঙ্গীর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘উনি হাঁটতে হাঁটতে এসে আমারে বলছে ভাই আমার হাতের বানটা একটু খুল দিবেন?

‘আমি বললাম আপনি কে? উনি বলল, আমারে এখানে বাইধা রাখছে। আমি বললাম কেডা? কয়, ওই যে পাশের লোকেরা। পরে আমি সাথে সাথে গেছি দেখতে। গিয়ে দেখি লোকগুলা নাই।’

তিনি বলেন, ‘পরে আরেকজন মুরুব্বির ডাইকা বলছি ওনারে চেনেন? আবার উনি বলছে যে উনি না কি সাংবাদিক। তখন আমাদের এখানে সাংবাদিক ইয়াসিন ভাইরে ডাইকা আনছি। উনি আবার ওনারে স্যালাইন, পানি খাওয়াইছে।’

হাসপাতালে নেয়ার সময় ক্লান্ত সিয়ামকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এর মধ্যেই তিনি তার ওপর চলা নির্যাতনের কথা জানান

স্থানীয় সাংবাদিক মো. ইয়াসিন বলেন, ‘পরিচিত ওই কাঠমিস্ত্রি ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন উনি আমাকে বলল যে উনি সাংবাদিক। ওনার কাছে জানতে পারলাম উনি ঢাকাতে কর্মরত আছেন। পরে আমি এখানকার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানালাম, তারাও আসলো। ওনার পরিচিত আত্মীয়স্বজনও আসলো। পরে ওনাকে নিয়ে তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেল।’

সারা গায়ে ব্লেডের আঘাত

উদ্ধারের পর সিয়ামকে পাশের ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তাকে দেখেছেন চিকিৎসক নূর রিফফাত আরা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, অসুস্থ ওই সাংবাদিককে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে। এছাড়া শরীরে অসংখ্য ব্লেডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার শারীরিকক অবস্থা বেশি ভালো না।’

স্বজনরা সিয়ামকে সেই হাসপাতালে রাখতে চাননি। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে।

সেই স্ট্যাটাস কী কারণে?

নিখোঁজ হওয়ার আগে ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে তার স্ত্রীর করা সাধারণ ডায়েরির পর।

বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে তিনি লেখেন, ‘পৃথিবীটা ভীষণ সুন্দর। আর মানুষও। সবাইকে সালাম। ভালো থাকবেন।’ আর ১০টার দিকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে শুক্রবার দুপুরে তেজগাঁও থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন স্ত্রী শারমীন সুলতানা।

সেই স্ট্যাটাস নিয়ে সিয়াম বলেন, ‘স্পেশাল কোনো কারণ না। সকাল বেলাটা আমার কাছে মনে হইছে যে মর্নিং খুব সুন্দর। সেই জায়গা থেকে একটা পজিটিভ ইমেজ নিয়ে আমি ওটা দিয়েছি এবং সবার ভালো থাকার প্রত্যাশাও করছি। এটার সাথে অন্য কোনো চিন্তা ভাবনা করার কোন সুযোগ নাই এবং পরবর্তীকালে আমি দেখলাম যে ফোনের চার্জও কম। ওই সময়কালে আর কোনো কিছুর করার সুযোগ ছিল না।

‘আমার মন খারাপও ছিল কয়েক দিন ধরে। তো আমি ভাবলাম যে আজকে অফিস না যাই। আমি একটু নদীটা উপভোগ করি। নদীর প্রতি আমার একটা ভালোবাসা আছে। তো আমি ওই আমিনবাজার ব্রিজটা পার হয়ে নদীর ঘাট, নদীর কাজকর্ম এগুলাই দেখছিলাম।’

এ বিভাগের আরো খবর