পৃথিবীটা ভীষণ সুন্দর। আর মানুষও। সবাইকে সালাম। ভালো থাকবেন।’-এমন স্ট্যাটাস দিয়ে ১৫ ঘণ্টা পর নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক সিয়াম সারোয়ার জামিলের খোঁজ মিলেছে।
নিখোঁজের একদিন পর শুক্রবার সাড়ে সাতটার দিকে সাভারের আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় দুই ব্যক্তি।
অপহৃত এই সাংবাদিককে নিরিবিলি এলাকায় মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজের পাশে ফেলে রাখা হয়। পরে এক কাঠমিস্ত্রি প্রথমে তাকে খুঁজে পান। তার নাম মো. জাহাঙ্গীর। সিয়াম যখন তাকে তার পেশাগত পরিচয় দেন, তখন তিনি তার পরিচিত স্থানীয় সাংবাদিক মো. ইয়াসিনকে ডেকে আনেন।
তার কাছে সব খুলে বলার পর সিয়ামের স্বজনদেরকে জানানো হলে তারা যায় ঘটনাস্থলে। এরপর তাকে সেখান থেকে নেয়া হয় ধামরাই উপজেলা হাসপাতালে।
ধামরাই উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক নূর রিফফাত আরা থারণা করছেন, সিয়ামকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে।
‘এছাড়া শরীরে অসংখ্য ব্লেডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা বেশি ভালো না’-বলেন ওই চিকিৎসক।
স্বজনরা সিয়ামকে সেখানে চিকিৎসা দিতে চাননি। তাই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় সেখানে।
বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াইল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। স্পষ্টভাবে জানি না। যেহেতু তাকে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই ধামরাই থানায় ইনফর্ম করে দিচ্ছি।’
উদ্ধারকারী দুই জন কী বলছেন?
উদ্ধারকারী কাঠমিস্ত্রী মো. জাহাঙ্গীর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘উনি হাটতে হাটতে এসে আমারে বলছে ভাই আমার হাতের বানটা একটু খুল দিবেন?
‘আমি বললাম আপনি কে? উনি বলল, আমারে এখানে বাইধা রাখছে। আমি বললাম কেডা? কয়, ওইযে পাশের লোকেরা। পরে আমি সাথে সাথে গেছি দেখতে। গিয়ে দেখি লোকগুলা নাই।’
তিনি বলেন, ‘পরে আরেকজন মুরুব্বির ডাইকা বলছি ওনারে চেনেন? আবার উনি বলছে যে উনি না কি সাংবাদিক। তেখন আমাদের এখানে সাংবাদিক ইয়াসিন ভাইরে ডাইকা আনছি। উনি আবার ওনারে স্যালাইন, পানি খাওয়াইছে।’
স্থানীয় সাংবাদিক মো. ইয়াসিন বলেন, ‘পরিচিত ওই কাঠমিস্ত্রি ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন উনি আমাকে বলল যে উনি সাংবাদিক। তখন ওনার কাছে জানতে পারলাম উনি ঢাকাতে কর্মরত আছেন। পরে আমি এখানকার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানালাম, তারাও আসলো। ওনার পরিচিত আত্মীয়স্বজনও আসলো। পরে ওনাকে নিয়ে তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেল।’
সিয়াম নেপালের একটি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এবং যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পশ্চিম নাখাল পাড়ার বড় বোনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ তিনি। বন্ধ তার মোবাইল ফোন।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে তেজগাঁও থানায় জিডি করেন সিয়ামের স্ত্রী শারমীন সুলতানা। জিডিতে উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানী বনানীর বিটিসিএল কলোনীর বাসা থেকে বের হয়ে পশ্চিম নাখাল পাড়া বড়বোনের বাসায় যান সিয়াম। সেখান থেকে সকাল ১০ টার দিকে বের হন। তারপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি।
যা জানালেন সিয়াম
সিয়াম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় আমিনবাজার ব্রিজের পাশে ফাঁকা জায়গাটায় হাঁটছিলেন। সে সময় তার হাতের ফোনসহ একজন টেনে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আরও দুজন পেছন থেকে আমাকে ধরে এবং ওই পরিস্থিতিতে আমাকে জোরপূর্বক মাটিতে ফেলে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরে চোখও বেঁধে দেয়।
এরপর তারা সারক্ষণ তাকে গিয়ে গাড়িতে করে ঘুরেছে। আর নামিয়ে দেয়ার সময় বলেছে, ‘এখানে ১০ মিনিট বসে থাকবি। নাইলে গুলি করে দেব।’
পুরোটা সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, তার কাছে মনে হয়েছে অপহরণকারীদের একজন তাকে চেনেন।
তবে তারা কারা, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার। জানিয়েছেন, এদের একজনকে তার উচ্চশিক্ষিত মনে হয়েছে। আর তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন।
সাংবাদিক সিয়াম জড়িত রাজনীতিতেও
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির অনলাইনে এক সময় কাজ করা সিয়াম বর্তমানে নেপালের কাঠমান্ডু ট্রিবিউন নামে একটি দৈনিকের ঢাকা ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সিয়াম এক সময় ছিলেন ঢাকা জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি।
সিয়ামের দ্রুত সন্ধান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মনির হোসেন অনিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খালিদ রাব্বি রেদোয়ান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ জানান, প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি শেষ করে সাংবাদিক সিয়াম সারোয়ার জামিল দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিকতা করছেন। তার নিখোঁজের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না তা খোঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।