আগুনে তছনছ হয়ে যাওয়া পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজি মুসা ম্যানসন আগে থেকেই ছিল ‘অগ্নিকুণ্ড’। মূলত আবাসিক ভবন হলেও এর নিচের তলাটা ঠাসা রাসায়নিক দাহ্য পদার্থে।
শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার কিছুক্ষণ আগে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। ভোর ৩টা ১৮ মিনিটে বিস্ফোরকে ঠাসা গুদামে আগুনের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে আসে ভোর সোয়া ৬টার দিকে। ততক্ষণে শেষ ৪ জনের জীবন। আহত অন্তত ২১ জন।
নিহত ব্যক্তিদের একজন সুমাইয়া আক্তার, ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চারতলায় থাকতেন। অচেতন অবস্থায় তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যু হয়েছে ভবনটির দারোয়ান রাসেল মিয়ার, তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ। ঘটনাস্থলেই তার প্রাণ যায়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিস ২ জনের মৃত্যুর খবর জানালেও পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে চিলেকোঠা থেকে আরও ২ জনের মরহেদ উদ্ধার করে। এদের একজন ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী ওলিউল্লাহ ব্যাপারী। অপজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ভবনটিতে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের গুদামের ওপর ছিল শতাধিক মানুষের বসবাস। জীবন আর মৃত্যুর পাশাপাশি বসবাস চলছিল আগে থেকেই।
ভবনটির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে তিনটি করে ইউনিট। সব মিলিয়ে ভবনটিতে বাসিন্দাদের সংখ্যা এক শর বেশি।
ছয়তলার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমরা শুরুতে নিচে নামতে পারি নাই। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে গ্রিল কেটে আমাদের নামাইছে।’
প্রায় ৮ বছর ধরে এই বাড়িতে আছেন শাহাদাত। তিনি বলেন, নিচতলায় কেমিক্যালের মার্কেট ও গোডাউন। দোতলা থেকে আবাসিক।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা মেট্রোর উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘এখানে প্রচুর পরিমাণের কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো সব অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। আমার জানামতে ফায়ার সার্ভিস এদের কোনো ধরনের লাইসেন্স দেয়নি। তবে আমি জানি না, সিটি করপোরেশন তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে কি না।
‘সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এ কেমিক্যাল গোডাউনে গড়ে উঠেছে। নিচতলায় কেমিক্যাল আর উপরে মানুষ বসবাস করে এর মানে অগ্নিকুণ্ডে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই না। এ জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
কেমিক্যালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে জানান দেবাশীষ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এগুলো হ্যাজার্ডিয়াস কেমিক্যাল। বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে এখানে। এগুলা দেখে বোঝা যাচ্ছে কঠিন হ্যাজার্ডিয়াস কেমিক্যাল।
‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে প্রথম আগুন নেভাতে আসি কেমিক্যালগুলোর জন্য আমাদের আগুন নেভাতে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কেমিক্যাল খোলা রাখা হয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। যারা এই কেমিক্যালগুলো এখানে রেখেছেন এই মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী।’
আগুন লাগার কারণ ফায়ার সার্ভিস এখন পর্যন্ত কিছু জানতে পেরেছি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দেবাশীষ বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমিক্যাল রি-অ্যাকশনের কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এখন তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে যাবে।’
আগুনে যারা আহত হয়েছেন তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে আমাদের টিম ১০ মিনিটের মধ্যে চলে এসেছে। আটকে পড়াদের দ্রুত উদ্ধার করতে পারায় হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে।’