বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আসিয়ান সম্মেলন: মিয়ানমারের ওপর চাপ চায় বাংলাদেশ

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ১০:২২

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সংকট নিরসনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।’

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ রাষ্ট্রের জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলন বসছে শনিবার। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ চায় ঢাকা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির কাছে এই আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

জাকার্তায় আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশের এই সম্মেলনে মিয়ানমারের ছায়া সরকারের পক্ষে যোগ দেবেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

করোনার কারণে এবারের জাকার্তা সম্মেলনে সব দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থাকছেন না। তবে জোটের ১০ দেশের কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে থাইল্যান্ড।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সংকট নিরসনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রিত রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তারা প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার জেলায় স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্য থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি।

এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রাখাইনের ওই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। এ ছাড়া তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে নোয়াখালীর ভাসানচর। ছবি: নিউজবাংলা

জাতিসংঘের নির্দেশনা

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নেয়া সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম। তবে, ভাসানচর পরিদর্শন নিয়ে তাদের দেয়া সুপারিশে সরকারের জন্য চারটি করণীয় ঠিক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে ভাসানচরের চারপাশের বেড়িবাঁধ আরও মজবুত ও উঁচু করা, দুর্যোগকালে রোহিঙ্গাদের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, শিশুদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ খুব ভালাে ও ইতিবাচক। তারা ১০ পৃষ্ঠার একটি ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এর দুই পৃষ্ঠার সার সংক্ষেপ আমাদের কাছে সম্প্রতি জমা দিয়েছে। পুরো প্রতিবেদন দ্রুত সময়ে জমা দেবে বলে জানিয়েছে।’

১ লাখ রােহিঙ্গার জন্য আবাসনসুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ করতে জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত মার্চে ভাসানচর পরিদর্শন করে।

মােমেন বলেন, ‘রােহিঙ্গাদের শিক্ষার বিষয়ে আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই। তবে, তাদের যেহেতু তাদের দেশে ফেরত যেতেই হবে এবং বাংলাদেশ যেহেতু মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে তাই তাদের শিক্ষাটা মিয়ানমারের ভাষাতেই হওয়া উচিত। এতে তারা দেশে ফিরলে সহজেই তাদের সমাজে মিশতে পারবে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের শিক্ষা তাদের সহায়তা করবে।'

বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়ানাের বিষয়ে মােমেন বলেন, ‘এটা তো আমরা আমাদের প্রয়োজনেই করব। সেখানে তো কেবল রোহিঙ্গা নয়, আমাদেরও হাজারো লোকজন, গবাদিপশু, পুলিশ স্টেশন, নেভি, কোস্টগার্ড, কৃষিজমি, মৎস্য খামার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকবে।

‘ভাসানচরের সাথে যােগাযােগের ক্ষেত্রে কোনাে সমস্যা হবে না। তারা সন্দ্বীপ হয়ে ভাসানচরে যেতে পারবেন। এই পথে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। ভাসানচর বাংলাদেশের ৭৫টি দ্বীপের একটি এবং এটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়েও ১০ গুণ বড়।'

৩ এপ্রিল রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে নেয়া সরকারি পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ঢাকার ১০ বিদেশি মিশনপ্রধান। তারা সরকারের উদ্যোগকে সুপরিকল্পিত ও কার্যকর বলেও আখ্যা দেন। সাড়ে চার ঘণ্টার ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১০টি দেশ ও জোটের রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে ১৭–২০ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের কারিগরি প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে যায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচরে যান।

সফর সম্পর্কে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন ১৮ এপ্রিল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাসানচরে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ ও নির্মাণকৌশল যথেষ্ট পরিকল্পিত ও কার্যকর। তবে আমরা আরও দুটি বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তা হলো রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান এবং বর্ষায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। তবে এখানকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম।'

জার্মান রাষ্ট্রদূত ওই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভাসানচরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা চমৎকার। এখানে সরাসরি ঘুরে আসায় বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার। আমরা সবকিছু কাছে গিয়ে দেখে এসেছি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এখন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে এটা নিয়ে কথা বলা সহজ হবে।'

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সেখানে কূটনীতিকরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জড়িত সরকারি–বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে। পরিবেশগত ঝুঁকি, সামগ্রিক অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ইচ্ছায় পাঠানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়গুলো সামনে এনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে এসেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তুরস্কের সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা সফরের সময় গত বছরের শেষের দিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবু সোলু বিভিন্ন দেশের সরকারে কাছে ভাসানচরের ছবি ও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা এবং নির্মাণকৌশলের বিস্তারিত পাঠানোর পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক কাজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সফর তারই ফল।

এ বিভাগের আরো খবর