চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই শিক্ষক তার বাবার নামে মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়ে ১৪ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।
ওই শিক্ষকের নাম মাহবুবুল হক। তার বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম জসিম উদ্দীন।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল রশীদ। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে।
চাকরির আবেদনের জন্য বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করেন মাহবুবুল। বাবার নামে ভুয়া সনদ বের করে সেটি দেখিয়ে ২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক পদে তিনি চাকরি করছেন ২০১২ থেকে।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের পক্ষে রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালকের কাছে ওই অভিযোগটি করেন ইসাহাক আলী।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আদমদীঘি উপজেলার কমান্ডার আব্দুল হামিদ তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানান, ওই উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের একমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন জসিম উদ্দীন মণ্ডল। তিনি বর্তমানে জীবিত। তার মাহবুবুল হক নামে কোনো সন্তান নেই।
অন্যদিকে বগুড়ার ১ নম্বর ছাতিয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হক আবু তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, মাহবুবুল হকের পিতার নাম জসিম উদ্দীন। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন ও মারা গেছেন।
তদন্তে জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের শেষ অংশ বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ সংগ্রহ করেন মাহবুবুল। সেটি নিজের বাবার বলে জমা দিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর নিজেই করে সনদটি তুলেছিলেন মাহাবুবুল।
কীভাবে মন্ত্রণালয় থেকে সনদটি সংগ্রহ করা হয়েছিল, এ বিষয়ে আরও তদন্ত হতে পারে বলছেন শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে শিক্ষক মাহাবুবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, ঢাকায় আমাকে জবাব দিতে হচ্ছে। তদন্তাধীন বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।
‘ঢাকাতে খুব দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছি। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল রশীদ জানান, মাহাবুবুলের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে। সেগুলোরও তদন্ত হয়েছে।
এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন ফেরদৌস চৌধুরী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
আবদুল রশীদ জানান, এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত শেষে ৮ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।