বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেফাজতের সমঝোতার প্রস্তাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘না’

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:১৭

বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে কথা বলেন। খুব নরম সুরে তিনি সমঝোতার ইঙ্গিত দেন। তবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে, এখানে আমার কিছু করার নেই।’

সাম্প্রতিক সহিংসতা ও ২০১৩ সালের ৫ মের তাণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ‘সমঝোতার’ প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে মন্ত্রী তাদেরকে ‘না’ করে দিয়েছেন।

সোমবার রাতের ওই বৈঠকে মন্ত্রী হেফাজত নেতাদের বক্তব্যও শোনেননি বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা একাধিক ব্যক্তি।

বৈঠকে ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ নিয়াজীসহ ১০ জন। ছিলেন আলোচিত নেতা মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হকও।

বৈঠক শেষে হেফাজত মহাসচিব কোনো কথা বলতেই রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ।’

বৈঠক শেষে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে কিছু তথ্য অবশ্য পাওয়া গেছে।

মন্ত্রীর দেখা পেতে সোমবার বিকেলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন হেফাজতের কয়েকজন নেতা। পরে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে চা চক্রের আমন্ত্রণ পান তারা।

বৈঠকের পরদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার সহসভাপতি কোরবান আলী কাসেমী

সোমবার রাত ১০ টার দিকে হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদীর নেতৃত্বে অন্তত ১০ জন নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন।

সে বৈঠকের আগে মন্ত্রী তার বাসায় ডাকেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন-অর-রশিদসহ গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। তাদের কয়েকজন হেফাজতের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী মন্ত্রীর সঙ্গে গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেন। খুব নরম সুরে তিনি সমঝোতার ইঙ্গিত দেন।

সাম্প্রতিক তাণ্ডবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো এসবের সঙ্গে জড়িত না আপনি জানেন। এটাও জানেন কারা এসব করছে, এভাবে গ্রেপ্তার চললে কীভাবে হবে?’

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব একটা কথা বলেননি।

এর মধ্যে কথা বলেন মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হক। তিনি তার ভাইয়ের মামলাগুলো বিবেচনার অনুরোধ জানান। পুলিশ যেন আর রিমান্ডে নেয়ার আবেদন না করে, সে কথাও বলেন।

সব শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে, এখানে আমার কিছু করার নেই।’

মামুনুল হক গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে উদ্বেগ স্পষ্ট। সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ভিডিওবার্তায় তাণ্ডবের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন

মন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে শেষে বেরিয়ে আসার আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন হেফাজত মহাসচিব।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখনও তাদেরকে কোনো আশা দেননি।

বৈঠকের পর দিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেছেন, এতে পরিস্থিতি পাল্টাবে না।

আগের দিনের বৈঠকের পর মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কেউ দেখা করতে চাইলে, দেখা করতেই পারে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখা করেছেন। কিন্তু তাতে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে, ধরা পড়েছেন হেফাজতের আরও এক জন নেতা। এবার ধরা পড়েছেন মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী। তিনি ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সহসভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় রাজপথে নামা হেফাজত ২৬ মার্চ থেকেই ব্যাপক সহিংসতা শুরু করে। সেদিন ঢাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ত্রাস তৈরি করে তা ছিল অবাক করার মতো।

দুই দিন পরের হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ৩৮টি সরকারি-বেসরকার প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয় তারা। সেদিন থেকে হামলা হতে থাকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরেও।

গত ২৬ মার্চ হঠাৎ করেই সহিংসতা শুরু করে হেফাজত। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি আক্রান্ত হতে থাকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়

৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর তাকে উদ্ধার করতে গিয়েও আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয়েও হামলা করে হেফাজত কর্মীরা। হামলা হয় ছাত্র ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরেও।

কেবল সেখানে নয়, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও সুনামগঞ্জের ছাতকেও হামলা হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। চট্টগ্রামে আহত এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুও হয়।

এরপর সরকার হেফাজতকে সতর্ক করে ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় গ্রেপ্তার অভিযান। সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ১০ জনে নেতা গ্রেপ্তার হন আট দিনের মধ্যে। আলোচিত নেতা মামুনুল হক ধরা পড়ার পর হেফাজতে উদ্বেগ এতটাই বাড়ে যে, আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ফেসবুকে ভিডিওবার্তা দিয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। মাননীয় সরকার সম্বোধন করে তিনি কোনো গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়।

এ বিভাগের আরো খবর