‘আমার ছেলে হইলো গরিবের ছেলে, কোম্পানির আন্ডারে কাজ কইরতো। যেখানে ঘটনা অইছে, সেখানে শ্রমিকও ন, কিছু ন। অন্যদের সাথে জামেলায় আমার ছেলে মরি গেছে। আমার আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাই, আল্লাহ এর বিচার করবো।’
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন আবদুল মতিন। তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে নিহত মো. রায়হানের বাবা।
ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর অচেতনের মতো পড়ে আছেন মা ছালেহা খাতুন। কারও কোনও সান্ত্বনাই তার মনকে প্রবোধ দিতে পারছে না।
রায়হানের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ১ নম্বর হরণী ইউনিয়নের উত্তর আদর্শ গ্রামে। সেই বাড়িতে এখন মাতম চলছে। বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় গোটা গ্রামের বাতাস এখন ভারী হয়ে আছে।
স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, রায়হানের পিতা আবদুল মতিন একজন কৃষক। আবদুল মতিনের ছয় ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে রায়হান পঞ্চম। পরিবারের অভাব-অনটনের কাছে পরাজিত হয়ে ছয় মাস আগে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাঁশখালীর কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্রেনচালক হিসেবে চাকরি নেন রায়হান।
বেতন-ভাতাসহ নানা কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে শনিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে শুক্রবার বিকেলে সেখানকার শ্রমিকরা রায়হানকে ক্রেন চালানো বন্ধ করে পরদিন সকালে বিক্ষোভে যোগ দিতে বলেন। ওই বিক্ষোভে যোগ দেন রায়হানও। বিক্ষোভ চলাকালে সংঘর্ষে নিহত হন রায়হান।
আবদুল মতিন বলেন, ‘অভাবের সংসারে একটু ভালো থাকনের আশায় ছয় মাস আগে রায়হান বাঁশখালীর ওই কোম্পানিত চাকরি লয়। সংসারের অভাব ঘুচাইতে গিয়ে আমার ছেলে লাশ হইব, তা জীবনে ভাবিনি।’
রায়হানের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আবদুল মতিন বলেন, ‘ছেলের জীবনের বিনিময়ে এই টাকা দিয়া কী করমু?
এলাকাবাসী জানান, রায়হান অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করতে চেয়েছিল। কিন্তু সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আগেই নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে তাকে।
রোববার বাদ মাগরিব উত্তর আদর্শ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে রায়হানের জানাজায় বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী উপস্থিত হন। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।