বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মামুনুলের রিমান্ড শুনানিতে যা হলো

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ১২:৩৩

রিমান্ড বাতিল চেয়ে মামুনুলের পক্ষে শুনানি করেন জয়নাল আবেদীন মেসবাহসহ কয়েকজন আইনজীবী। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, আজাদ রহমানসহ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন।

ভাঙচুরের মামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী সোমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এই আদেশ দেন।

মোহাম্মদপুর থানায় ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক।

রিমান্ড বাতিল চেয়ে মামুনুলের পক্ষে শুনানি করেন জয়নাল আবেদীন মেসবাহসহ কয়েকজন আইনজীবী। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, আজাদ রহমানসহ কয়েকজন জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ শুনানিতে বলেন, ‘মামুনুল হক সাহেবকে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল বাদীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। কারণ এই মামলায় মামুনুল হক সাহেবের নির্দেশে নাকি কোন এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছে এবং মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

‘কিন্তু মামুনুল হক সাহেব কী নির্দেশ দিয়েছেন, কখন নির্দেশ দিয়েছেন এ-সম্পর্কিত কোনো বক্তব্য মামলার এজাহারে নেই। এর চেয়ে বড় কথা মামুনুল হককে গত এক বছর সারা বাংলাদেশে দেখা গেছে, তিনি পলাতক ছিলেন না, তাহলে এত দিন কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না? তা ছাড়া গতকাল (রোববার) তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে যে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তার কোনো রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। আসলে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, মামুনুল হককে ছোট করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘যেখানে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ নেই, সেখানে তাকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা যুক্তিযুক্ত নয়। সেই সাথে আদালতে আমার কয়েকজন সহযোগী আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, যা আদালতের নিয়মকে সমর্থন করে না। এভাবে আদালত চললে বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

অপরদিকে মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু তার বিরোধিতা করে বলেন, ‘এই আসামি তার কর্মী বাহিনীকে দিয়ে দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, তাই তার জামিন আবেদন বাতিলপূর্বক রিমান্ডের আদেশ দেয়া হোক।

‘রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনের ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা তৈরি করছেন তিনি। ইতোমধ্যে তার অনেক প্রমাণ মিলেছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য উদঘাটিত হওয়া আবশ্যক।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মামলার বাদী মসজিদে গিয়েছিল, সেখানে মামুনুল হকের অনুসারীরা মামুনুল হকের নির্দেশে মামলার বাদীর ওপর হামলা করে এবং তাকে মেরে মসজিদ থেকে বের করে দেয়। তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা এবং ২০০ ডলার ছিনিয়ে নেয়া হয়।

‘সেদিন মামুনুল হক ও তার ভাইয়ের নির্দেশে মামুনুলের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বাদীকে মারধরের পাশাপাশি তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ায় মামলার এজাহার অনুযায়ী আসামি বাদীপক্ষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। মামলার শুনানিতে আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি, কারণ এ ঘটনায় আরও কারা কারা জড়িত ও পলাতকদের তথ্য জানতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাকে সাত দিনের রিমান্ড আদেশ দেন বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। বিচারক আদেশ পড়ে শোনান।

এ সময় মামুনুল হককে আদালতের কাঠগড়ায় নিষ্প্রভ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিচারক তাকে উদ্দেশ করে জিজ্ঞাসা করেন তার কিছু বলার আছে কি না?

উত্তরে মামুনুল হক বলেন, যেহেতু পবিত্র রমজান মাস তাই পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাকে যেনো নিয়মিত রোজা রাখা, নামাজ পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত করার সুযোগ প্রদান করা হয়।

এ সময় তার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, তিনি (মামুনুল) দেশের একজন নাম করা আলেম। তাই তার ইচ্ছে অনুযায়ী ইবাদত করার সুযোগ যেন প্রদান করা হয়। তবে আদালতের কার্যক্রম শুরুর কয়েক মিনিট আগে আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেসবাহমসহ কয়েক জন আইনজীবীকে নিচু হয়ে মৃদুস্বরে মামুনুল হকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

শুনানি শেষে মামুনুলকে ডিবির কার্যালয়ে নেয়া হয়।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে রোববার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্ট-কাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দুটি মামলা হয় মামুনুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে মামুনুল হককে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

৩ এপ্রিল রিসোর্ট-কাণ্ডের পরদিন ওই মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুল হক। এরপর আর তাকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

সোনারগাঁয় রিসোর্ট-কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে মামুনুল হকের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র সে সময় জানায়, মামুনুল হকও যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তাই করছেন। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।

‘সমমনাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার একটা চিন্তা তার মধ্যে চলে এসেছিল। বড় নেতা হতে চেয়েছিলেন, তাই তার বক্তব্যের ধরন পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় যারাই করেছেন তারা কেউ ছাড় পাবে না, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর