করোনা নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন যেন ক্রমেই শিথিল হয়ে পড়ছে। লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে ঢাকা শহরের সড়ক ও অলিগলিতে যানবাহন এবং মানুষের চলফেরা তা-ই জানান দিচ্ছে।
ষষ্ঠ দিনের সকালে রাজধানীর কোনো এলাকাতেই কঠোর বিধিনিষেধ মানতে দেখা যায়নি নগরবাসীকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টগুলোতেও পুলিশের উপস্থিতিও ছিল কম।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, বিজয়সরণি, কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, উত্তরা, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে থাকা দোকানপাট প্রায় সবই খোলা।
সড়কে বাস চলতে দেখা যায় কর্মীদের বহনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মিনিবাস। অন্যদিনের তুলনায় বেড়েছে প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার প্রধান রাস্তায় প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা চোখে পড়ে। বাস চলাচল না থাকলেও দুই-একটা অফিসগামী বাস চোখে পড়ে।
নিউমার্কেট এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেই একসঙ্গে হাঁটতে দেখা যায় পাঁচ তরুণকে। তাদের কারও মুখে ছিল না মাস্ক। পাশেই নির্বিকার দাঁড়িয়েছিল একদল পুলিশ।
শান্তিনগর মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে বসেছে বাজার। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বেশির ভাগ মানুষকে। রাস্তায়ও ছিল অগণিত মানুষ।
কারওয়ান বাজার এলাকায় মূল সড়কে কোনো বাস চোখে না পড়লেও প্রচুর রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও অটোরিকশা দেখা গেছে। কোনো কোনো সড়কে যানবাহনের চাপে সড়কে ধীরগতিও লক্ষ করা যায়।
রাজধানীর কয়েকটি কনস্ট্রাকশন সাইটে নির্মাণশ্রমিকদের কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই নির্মাণকাজ চালাতে দেখা গেছে। দলে দলে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে গার্মেন্ট কর্মীদের।
অফিসগামীরা গণপরিবহন না পেয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেক অফিসই তাদের কর্মীদের বলেছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অফিসে আসতে।
রাজধানীর বাসটার্মিনালগুলোতে দেখা যায়, পরিবহনশ্রমিকরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন। সকাল বেলায় লুডো খেলতে বসেছেন কেউ কেউ। সেখানেও নেই স্বাস্থ্যবিধি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে, চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার থেকে ১১ দফার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় যা আছে
১. সকল প্রকার গণপরিবহন সড়ক রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদনব্যবস্থা, জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া বিদেশগামী, বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন: ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
৩. সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবল প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্পকারখানার শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক শিল্পকারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতিজরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (Takeway/Online) করা যাবে। কোনো অবস্থাতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৬. শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে দোকানসমূহ পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না।
৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।