হাসপাতালে চিকিৎসককে দিয়ে গাড়ি নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের হেনস্তার শিকার হয়েছেন এক গাড়িচালক। ওই চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও তাকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি ফোনে প্রতিবাদ করলে তাকে কারাগারে নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
গাড়িটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার কামরুন নাহার মুক্তা ও গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার এনামুল কবির খানের।
একই এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির আরেক চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। তবে চিকিৎসক মুক্তা ও এনামুলের বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেনি।
ডা. মুক্তা নিউজবাংলাকে জানান, তার বাসা এলিফ্যান্ট রোডেই। সকালে তাকে হাসপাতালে নামিয়ে ড্রাইভার বাসায় ফিরছিলেন। তিনি তাকে তার আইডিকার্ড দিয়ে পুলিশকে দেখাতে বলেন। ফেরার পথে গাড়ির চালককে পুলিশ আটকালে চালক জানান, চিকিৎসককে হাসপাাতালে দিয়ে এসেছেন। প্রমাণ স্বরূপ তিনি চিকিৎসকের আইডি কার্ড দেখান।
পুলিশ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করলে চালক কথা বলার জন্য ফোনে ওই চিকিৎসককে ধরিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি না হয়ে কারাগারে নেয়ার হুমকি দেয়।
ডা. মুক্তা বলেন, ‘পুলিশি ঝামেলা এড়াতে ড্রাইভারকে আমার আইডি কার্ড দিয়ে দিই। পুলিশ আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরেও সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেয়। এমনকি বেশি কথা বললে ছয় মাসের জেল দেয়ার হুমকি দেয়।’
হতাশ চিকিৎসক বলেন, ‘এমন অবস্থায় আমরা কীভাবে জনগণের চিকিৎসা দেব? যে কোভিড প্রতিরোধের জন্য লকডাউন, সেই কোভিড যোদ্ধাদেরই যদি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে চিকিৎসা দেবে কে, আর লকডাউনই বা কেন?’
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ হয়ে গেছে সব প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান। গণপরিবহনও বন্ধ।
এই সময়ে যারা বাড়ির বাইরে যেতে চান, তাদেরকে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিতে হচ্ছে। তবে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মীদের এই পাস লাগবে না। তারা পরিচয়পত্র দেখালেই হবে।
তবে বিধিনিষেধের প্রথম দিন রাজধানীতে এক চিকিৎসককে পরিচয়পত্র দেখানোর পরও পাস না থাকার কারণে জরিমানা, এক চিকিৎসককে ‘কসাই’ বলার মতো ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
পরদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়ার পাশাপাশি সেই চিকিৎসকের জরিমানার টাকা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের আচরণের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, তাদেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
এনামুল কবির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইজিপি এ বিষয়ে অবহিত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হেমাটোলজি বিভাগ চিকিৎসক ইমরান হাবিব রাজু ডিউটি সেরে সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে পুলিশ তাকে নামিয়ে সিএনজি বাদ রেখে বাসায় যেতে বলে। এই যে হয়রানিগুলো হচ্ছে এমন যদি চলতে থাকে আমাদের কাজ কীভাবে করব।’