লকডাউনের মধ্যে হাসপাতালে ডিউটি শেষে ফেরার পথে পুলিশের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কে জড়ানো চিকিৎসক সাঈদা শওকত জেনি পুরো বিষয়টি নিয়ে বেশ হতাশ। তিনি বেশ দুঃখ পেয়েছেন। বলেছেন, এই দেশ ছেড়েই চলে যাবেন।
রোববার দুপুরে করোনাকালীন ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার পথে এলিফ্যান্ট রোডে তার গাড়ি থামান নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুম। তার গাড়িতে সাঁটানো বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের স্টিকার, গায়ে চিকিৎসকদের পরা অ্যাপ্রোন।
তবু তার কাছে পরিচয়পত্র চাওয়া নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন দুই জনই। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।
ওই চিকিৎসক তখন গাড়ি থেকে বের হয়ে এলে পুরো বিষয়টি ভিডিও করেন সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরাও। পরে ভিডিও কেটে সেগুলো আপলোড করা হয় ফেসবুক পেজে।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেনি বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। ডাক্তার হিসেবে যদি এই সম্মান পাই তবে আমার কিছু বলার নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বীর বিক্রম। আমার বিদেশে যাওয়ার অনেক সুযোগ ছিল। আমার আব্বা এই দেশে রেখেছে।
‘আমার গায়ে সাদা এপ্রোন, আমার গাড়িতে বিএসএমএমইউ এর ডিরেক্টররের সাইন করা পাস, বিএসএমএমইউ এর লোগো আর তারা আমাকে বলে আপনার আইডি কার্ড কোথায়? আপনার মুভমেন্ট পাস কোথায়? ডাক্তারের আইডি কার্ড, ডাক্তারের মুভমেন্ট পাস! কোথায় সম্মান করা হবে সেখানে আমাকে বলে আমি নাকি পাপিয়া।’
গত বছরের শুরুতে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শামীমা নূর পাপিয়াকে যিনি যৌন ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ আছে।
ডা. জেনি বলেন, ‘করোনার সময় যেখানে আমাদের সম্মান করে মাথায় তুলে রাখবে, সেখানে এই দিল আমাকে এই দেশ! আমি দুঃখে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এই দেশে ছেড়ে যাব তো আমরা। সবাই ছেড়ে যাবে এই দেশ।’
সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেও আক্ষেপ করেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘আপনাদের কোন সাংবাদিক আমাকে একটু সাহায্য করেনি। কেউ আমার জন্য এগিয়ে আসেনি। অনেক সাংবাদিক ভাই ছিল। উল্টো তারা বলছে ডাক্তার ভাইরা খুব খারাপ।
‘এই করোনাকালে আমি পিপিই পরে ছিলাম। আমার জান শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আমি আসতেছি বাসায়। তারা আমাকে রাস্তার মধ্যে থামিয়ে হয়রানি করল কিন্তু সাংবাদিক ভাইয়েরা পুলিশকে বাহবা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার সাংবাদিক ভাইদের উপর বেশি মন খারাপ। এই জাতি আমাকে ডাক্তার বানিয়েছে। আমি করোনাকালে সার্ভিস দিতে গিয়ে যে হয়রানির স্বীকার হলাম আমার আর দুঃখ রাখার জায়গা নেই।
‘ওখানে একজন সাংবাদিক ছিল যে ভিডিও করে কেটে কেটে সাইটে ভিডিও আপলোড করছে। সে আমাকে বলে ডাক্তাররা খুব খারাপ। তাইলে করোনা হলে তারা কোথায় যাবে?
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ডাক্তারই আমাদেরকে বলেছিলেন, আপনারা গণমাধ্যমের লোক। আপনারা ভিডিও করেন না কেন? কিন্তু পরে তিনিই আরও উত্তেজিত হয়ে উল্টাপাল্টা বলা শুরু করেন। আমাদের কোনো গণমাধ্যমকর্মী তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি।’
তবে ডা. জেনি বলেন, ‘আপনি কি বুঝতে পারেন না যে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি থেকে বের করে ভিডিও করেছে? যখন আমি উত্তেজিত হয়ে গেছি, আমাকে বলছে আমার ডিরেক্টরের সাইনসহ কাগজ ভুয়া। আমার বিএসএমএমইউ এর লোগো লাগানো গাড়ি ভুয়া। আমি নাকি ভুয়া ডাক্তার।’