বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনে এবার ডাক্তার-পুলিশ বিতর্কে তোলপাড়

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ২২:২১

গত বুধবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন কয়েকজন চিকিৎসক রাস্তায় নেমে লাঞ্ছিত হওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। মুভমেন্ট পাস ছাড়া বাইরে এসে জরিমানা পরিশোধ করা এক চিকিৎসকের টাকাও ফিরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে লকডাউনের পঞ্চম দিনে এই ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চিকিৎসক আর পুলিশ কর্মকর্তা দুই জনই উত্তেজিত হয়ে নানা কথা বলতে থাকেন। তাদের দুই জনের বাবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই পরিচয়টি নিয়েও হয় বাদানুবাদ।

গাড়িতে চিকিৎসক স্টিকার সাঁটানো, গায়ে অ্যাপ্রোন। তিনি নিজেও বলছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন।

তবে এই পরিচয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না পুলিশ কর্মকর্তা। দেখতে চাইছিলেন পরিচয়পত্র।

আর এ নিয়ে শুরু দুই পক্ষে তর্কাতর্কি। একজন গণমাধ্যমকর্মী সেই দৃশ্য ধারণ করেন মোবাইল ফোনে। আর ভিডিওটি একটি জাতীয় দৈনিকের ফেসবুক পেজে আপলোড হওয়ার পর এক মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়।

তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চিকিৎসক আর পুলিশ কর্মকর্তা দুইজনই উত্তেজিত হয়ে নানা কথা বলতে থাকেন। তাদের দুইজনের বাবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই পরিচয়টি নিয়েও হয় বাদানুবাদ।

যে সংবাদকর্মী ভিডিওটি ধারণ করেছেন, তিনি ওই চিকিৎসককে উদ্দেশ করে আপত্তিকর কথা বলেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে এখন তুমুল আলোচনা।

গত বুধবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন কয়েকজন চিকিৎসক রাস্তায় নেমে লাঞ্ছিত হওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। মুভমেন্ট পাস ছাড়া বাইরে এসে জরিমানা পরিশোধ করা এক চিকিৎসকের টাকাও ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এর মধ্যে লকডাউনের পঞ্চম দিনে এই ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ করে দিলেও চালু রাখা হয়েছে গণসাধ্যমসহ জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাড়ির বাইরে যেতে হলে মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করা পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছিলেন, লকডাউন চলাকালে চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কোনো পাস নিতে হবে না।

এরমধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের এই ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন সড়কে কড়াকড়ি অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। বিপুল সংখ্যক গাড়ি চলছে সকাল থেকে রাত অবধি। অবশ্য পুলিশের তল্লাশি চৌকিও আছে এখানে সেখানে।

কী হয়েছে সেখানে

দুপুরের দিকে একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুম। জানতে চান মুভমেন্ট পাস আছে কি না। ভেতরে থাকা নারী নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন তার জন্য পাস দরকার নেই।

এরপর হয় তর্কাতর্কি।

ওই চিকিৎক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক (রেডিওলজিস্ট) ডা. সাঈদা শওকত জেনি।

তিনি নিজেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাগারাগি করেন। বলেন, তার কেন পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

পুলিশ কর্মকর্তা ওই চিকিৎসককে ভুয়া বললে তিনি আরও ক্ষেপে যান। বলেন, তিনি একজন বীর বিক্রমের মেয়ে।

পরে নিউমার্কেট থানার ওসি বলেন, তিনিও বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে।

এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন একজন নির্বাহী হাকিম। তাকে কাছে পেয়ে চিকিৎসক জেনি উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, তার কাছে এসে ‘সরি’ বলতে হবে। ডাক্তারদের সঙ্গে পুলিশ যাচ্ছেতাই আচরণ করছে, হয়রানি করছে।

ওই হাকিম পরে ঘটনাটি মিটমাট করার চেষ্টা করেন আর আধা ঘণ্টা পর চিকিৎসক জেনি ঘটনাস্থল ছেড়ে যান।

যা বলছেন চিকিৎসক

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডা. জেনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকালে আমি পিপিই পরে ছিলাম। আমার জান শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আমি আসতেছি বাসায়। তারা আমাকে রাস্তার মধ্যে থামিয়ে হয়রানি করল।

তিনি বলেন, ‘সে (ওসি কাইয়ুম) আমাকে বলে ডাক্তাররা খুব খারাপ। তাইলে করোনা হলে তারা কোথায় যাবে?’

‘আমার গায়ে সাদা এপ্রোন, আমার গাড়িতে বিএসএমএমইউ এর ডিরেক্টরের সাইন করা পাস, বিএসএমএমইউ এর লোগো আর তারা আমাকে বলে আপনার আইডি কার্ড কোথায়? আপনার মুভমেন্ট পাস কোথায়। ডাক্তারের আইডি কার্ড, ডাক্তারের মুভমেন্ট পাস!’

কেন এত রাগলেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. জেনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে আমার কাগজ দেখে বলে আমার কাগজ নাকি ভুয়া। আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ভুয়া। তাহলে আমি কোথায় রাখব এই দুঃখ। আমি এমবিবিএস, এমডি।’

‘ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি থেকে বের করে ভিডিও করেছে যখন আমি উত্তেজিত হয়ে গেছি। আমাকে বলছে আমার ডিরেক্টরের সাইনসহ কাগজ ভুয়া। আমার বিএসএমএমইউ এর লোগো লাগানো গাড়ি ভুয়া। আমি নাকি ভুয়া ডাক্তার।’

ওসির মুখ বন্ধ, যা বললেন ম্যাজিস্ট্রেট

ঘটনাটি নিয়ে নিউমার্কেট থানার ওসি এস এ কাইয়ুম নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।

কিন্তু গত দুইমাস ধরে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ কমিশনার পদটি খালি থাকায় এই বিষয়ে কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ওখানে দায়িত্বরত ছিলেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই চেক পোস্টে গাড়ি চেক করা হচ্ছিল। সবাই মোটামুটি সহযোগিতা করছিল। তবে এর মধ্যে একটা সিএনজিকে একটি গণমাধ্যমের পরিচয়ে ধরা হলে সেটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। সাংবাদিকদের দুইটা গাড়ি এমন ভুয়া পাওয়া গেছে।’

ডা. জেনির সঙ্গে কী হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে ডাক্তার বললে আমরা আইডি কার্ডটা দেখছি, ছেড়েও দিচ্ছি। যাদের কার্ড নেই তারা অনেকেই ভিজিটিং কার্ড দেখাচ্ছেন, আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। ওনাকে ওসি সাহেব কার্ডটা দেখতে চেয়েছিল। এরপর ডাক্তার উত্তেজিত হয়ে যান। তারপর আমাকে ডেকে নেন।’

কিন্তু অ্যাপ্রোন পরা বা গাড়িতে সিল থাকার পরও কি আইডি কার্ড চেক করার কোনো কারণ ছিল?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন তো অনেকেই এমন ভুয়া পরিচয় দিয়ে থাকেন। ভুয়া ডাক্তার আমরা দুই একজন পাচ্ছি। সবাই তো সব সময় আইডি কার্ড নিয়ে বের হয় না। কিন্তু ওনার কাছে আইডি কার্ড চাওয়া হলেই উনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।’

পরিস্থিতি কীভাবে সামলেছেন, সেটিও জানান ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি ওইসময় শুধু ওনাদের দুইজনের কথা চিন্তা করিনি। আমি চিন্তা করেছি সারা দেশের। যদি কোনো একটা অঘটন ঘটে তবে অন্য রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যেত। পুলিশ একটা ঝামেলা করবে আবার ডাক্তাররাও একটা ঝামেলা করবে। তাই আমি চেষ্টা করছি বিষয়টি সমঝোতা করে ফেলতে।

‘ওসিকে আমি বুঝিয়েছে। ওনার (ডাক্তারের) সাথে আরেকজন ছিলেন। পরে তার সাথে কথা বলে তাকেও বুঝিয়েছি। এরপর বিষয়টি এভাবেই সমাধান হয়েছে’।

ডাক্তাররা ক্ষুব্ধ

সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি অনেক চিকিৎসক নাকি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের কাছে নাকি মুভমেন্ট পাস চাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার নাকি মামলার শিকারও হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘পরিচয় দেয়ার পরও তার সঙ্গে এটা করা উচিত হয়নি; যেহেতু তিনি জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতদের মধ্যে পড়েন। আশা করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর