হেফাজতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় তার যোগসূত্রের পাশাপাশি বহু বিবাহ ও রিসোর্ট-কাণ্ডের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। সোমবার রিমান্ড আবেদনসহ তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার নাশকতা ও ভাঙচুর মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ মামলাতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে সোমবার।
একথা জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ। হেফাজতের আলোচিত নেতা মামুনুলকে রাতে তেজগাঁও থানাতেই রাখা হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আটকের পর থানায় মামুনুলকে তিন বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাৎক্ষণিক সেসব প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি মামুনুল। রিমান্ড পাওয়া গেলে মামুনুল হককে সাম্প্রতিক ঘটনার পাশাপাশি ২০১৩ সালের সহিংসতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মামুনুলের বিরুদ্ধে আগে হওয়া অন্য মামলার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
এর আগে রোববার পৌনে ১টার দিকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শিক্ষকতা করেন ওই মাদ্রাসায়।
গ্রেপ্তারের পর মামুনুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রিসোর্ট-কাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দুটি মামলা হয় মামুনুলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামুনুল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে মামুনুল হককে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
৩ এপ্রিল রিসোর্ট-কাণ্ডের পরদিন ওই মাদ্রাসায় হেফাজত নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মামুনুল হক। এরপর আর তাকে সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।
সোনারগাঁয় রিসোর্ট-কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে মামুনুল হকের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেপ্তার হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র সে সময় জানায়, মামুনুল হকও যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান মামুনুল হক সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক দেখলেন তার কথায় তো অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, অনেক সমর্থক তার, উনি যা বলছেন তারা তাই করছেন। ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে তিনি যা বলেছেন, তাই হয়েছে। তখন তিনি ভাবলেন জামায়াত-বিএনপি তার সঙ্গে আছে, তিনি তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারবেন।
‘সমমনাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার একটা চিন্তা তার মধ্যে চলে এসেছিল। বড় নেতা হতে চেয়েছিলেন, তাই তার বক্তব্যের ধরন পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় যারাই করেছেন তারা কেউ ছাড় পাবে না, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’