বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনে পদ্মা সেতুর কাজে ধীরগতি

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:১০

করোনার লকডাউনেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ থেমে নেই। তবে নানান বিধিনিষেধের কারণে কাজের গতি অনেক কমে গেছে।

স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ চলছে ধীর লয়ে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব এবং সরকারঘোষিত দ্বিতীয় দফার লকডাউনের প্রভাবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে এই ধীরগতি তৈরি হয়েছে।

সেতুর অবশিষ্ট কাজ এগিয়ে নিতে এক যোগে কাজ করছে দেশি-বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীরা। সব কাজই সমানতালে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টায় সেতু কর্তৃপক্ষও সজাগ। তবু নির্মাণে প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রযুক্তি সক্ষমতার সবটা এক সঙ্গে ব্যবহার করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। করোনা মহামারীতেও কাজ থেমে থাকেনি। এই লকডাউনেও চলছে কাজ। তবে আগের মতো কাজ হচ্ছে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে গত এক-দুই বছর আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ কাজ হতো, এখন সেই কাজ হচ্ছে না। কাজের গতি অনেক কমে গেছে।

কাজের সক্ষমতা সবটা ব্যবহার করতে না পারার কারণ হিসেবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়ী করছেন করোনাকে।

পদ্মায় মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সদরদপ্তর চীনের উহানে। গত বছর এ শহরেই প্রথম প্রথম করোনার বিস্তার ঘটে। ফলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই বিরূপ প্রভাব পড়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে।

চীনে ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকা পড়েন চীনা শ্রমিক-প্রকেশলীদের অনেকে। আর দেশে ভাইরাসটির প্রকোপ শুরুর পর শ্রমিক ও নির্মাণ উপকরণের অপ্রতুলতার কারণে কাজে ধীরগতি তৈরি হয়। যার প্রভাব এখনও চলছে।

তারা আরও জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় এখন লকডাউন চলছে। দ্বিতীয় দফায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে সেতু কর্তৃপক্ষ কর্মী ও প্রকৌশলীদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত ৫ এপ্রিল প্রকল্প এলাকায় লকডাউন জারি করেছে।

প্রকল্প এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার দেশি-বিদেশি লোক কর্মরত রয়েছেন। আর সেতু কর্তৃপক্ষের এই লকডাউনের কারণে প্রকল্পে কর্মরত কোনো দেশি-বিদেশি শ্রমিক, কর্মী ও প্রকৌশলীর প্রকল্প এলাকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাইরে থেকেও কেউ ভেতরে ঢুকতে পারছেন না। বাইরে থেকে আসা কেউ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট হলে তাকে কাজে যোগ দেয়ার আগে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এরপরও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত হয়ে তাকে কাজে যোগ দেয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

২০২২ সালের জুন মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে। কড়া নিরাপত্তা আর পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিন রাত কাজ করছেন শ্রমিক-প্রকৌশলীরা।

এর আগে খরস্রোতা পদ্মার বারবার রূপ বদলের কারণে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিলেও বাধাগ্রস্ত হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ। ফলে আগের কাজের ধারাবাহিক অগ্রগতির ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন শুধু দৃশ্যমান বাস্তবতাই নয়, যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার অপেক্ষাও কেবল স্বল্প সময়ের।

সেই লক্ষ্য নিয়ে এখন করোনা এবং লকডাউনের বিধিনিষেধে যখন সারাদেশে মানুষ অনেকটা ঘরবন্দি, তখন পদ্মা সেতুতে দিন-রাত তিন শিফট কাজ চলছে।

পদ্মা বহুমূখী সেতুর ওপরের তলা দিয়ে চলবে যানবাহন। স্টিল কাঠামোর ওপর বসানো হবে ২ হাজার ৯১৭টি কংক্রিটের স্ল্যাব। ইতিমধ্যে সড়কের সব স্ল্যাব নির্মাণ কাজ শেষ। চলছে বসানোর কাজ। এরই মধ্যে ২ হাজার ২৭৫টি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে।

এছাড়া সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করবে রেল। রেলপথের কাজও এগিয়ে চলেছে। সেতুর ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এখন একের পর এক রেল স্ল্যাব বসছে মূল সেতুতে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ২ হাজার ৪৭০টি বসানো হয়েছে।

পদ্মা সেতুর উভয় তীরকে সুরক্ষা দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে নদী শাসনের কাজ। যার মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ১২ কিলোমিটার এবং মাওয়া প্রান্তে রয়েছে ২ কিলোমিটার নদীর তীর। এরই মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী শাসন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে দ্বিতল স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি সেতুর ৪২টি পিয়ারের ওপর বসেছে ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে শেষ হয় স্প্যান বসানোর কাজ। যার মধ্য দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি।

নদী শাসন কাজের উপসহকারি প্রকৌশলী মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের কাজ চলছে। প্রকৌশলী ঠিকাদার, শ্রমিক সবাই কর্মএলাকায় রয়েছেন। সব ধরনের ম্যাটেরিয়াল রয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।’

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, প্রকল্প এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে সুরক্ষিত রেখে কাজ করতে হচ্ছে। সেতুর কাজ এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়নি।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে মূল সেতুর ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

২০০৭ সালের আগস্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলে। শেষে আওয়ামী লীগ সরকার দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেতুর সঙ্গে রেলপথও যুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

রিপোর্টটি তৈরিতে অগ্রগতির তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন শরীয়তপুর প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান মনির।

এ বিভাগের আরো খবর