হেফাজতে ইসলামকে ‘অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়’ উল্লেখ করে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব দাবি করেছেন, ২০১০ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের হামলা, ভাংচুর, বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াও জাতীয় কর্মকাণ্ড চালায়নি।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বর অবরোধের কর্মসূচিও শান্তিপূর্ণ ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।
আট বছর আগের দেশ কাঁপানো সেই মামলা এবং এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ যখন একের পর এক হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার করছে, তখন শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন মাওলানা হাবীব।
তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে আসছে। কিন্তু একটি গ্রুপ সব সময় হেফাজতের আন্দোলনে বাধা দিতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাও-পোড়াও এবং ভয়ঙ্কর রকমের তাণ্ডব চালিয়ে অতপর সরকারের ছত্রছায়ায় তাদের সেই তাণ্ডবকে হেফাজতের তাণ্ডব বলে প্রচার করে আসছে।’
স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর কেন্দ্র ঢাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাসহ সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সেখানে রেল স্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডাক বাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেয়।
নারায়ণগঞ্জে রোডে হেফাজতের তাণ্ডব। ফাইল ছবি
২৮ মার্চ হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হেফাজত কর্মীদের আক্রমণ ছিল ভীতি জাগানিয়া। সরকারি-বেসরকারি ৩৮টিওর বেশি প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, আগুনের পাশাপাশি আক্রমণ হয় পুলিশের ওপর। নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জেও সহিংসতা চালানো হয়েছে।
৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে কথিত স্ত্রীকে নিয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর সেই এলাকার পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জ, সুনামগঞ্জেও ত্রাস তৈরি করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এরপর সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতা দেয়া হয়। এরই মধ্যে অন্তত ছয় জন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে আসামি করা হয়েছে। আরেক আলোচিত নেতা মামুনুল হককে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে এসব ঘটনায় হেফাজতের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, তাদের কর্মসূচিতে তাণ্ডব হয়েছে সরকারের ছত্রছায়ায়।
তিনি বলেন, ‘সেদিন সরকারের ছত্রছায়ায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ যারা বাইতুল মোকাররম, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তাণ্ডব চালিয়েছে। এই তাণ্ডব তারাই ঘটিয়েছে, তারাই তাণ্ডবের মূল হোতা।’
২৮ মার্চ হরতাল তাণ্ডবের দুই দিন পর দোয়া দিবস ও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজত আর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার কারণ হলো, সামনে রমজান মাস, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস, এবাদত বন্দেগীর মাস। এই মাসে যেন মানুষের কোনো প্রকার অসুবিধা না হয় সে দিকে লক্ষ রেখে কোনো কর্মসূচি দেয় নাই।’
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডব অস্বীকার করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোথাও একটি রিকশার গায়ে কেউ হাত দিয়েছে বলে প্রমাণ দিতে পারবে না৷ কোনো জায়গায় সামান্যতম কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর হেফাজতে ইসলাম করে নাই৷’