হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবাকে কেন আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না এই নোটিশ দেয়ায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ২ নম্বর গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম খান শুক্রবার আলফাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি নম্বর-৫৭৪।
ঝর্ণার বাবা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়ালিয়ার রহমান ওরফে ওলি মিয়া। তিনি গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কামারগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১২ এপ্রিল তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
সাধারণ ডায়েরিতে মোনায়েম খান উল্লেখ করেন, ‘ওয়ালিয়ার রহমানের পরিবারবর্গ হেফাজতের সঙ্গে জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকায় গত ১২ এপ্রিল ওলিয়ার রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ওই নোটিশ দেয়ার পরদিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু করে সাতটার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ০০৩৯৩২৯১০৭৪১৮০, +৬০১১১৬৭০৪৮৪০, +৩৭০৫৭৭৯ নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে কল করে গালিগালাজ করে এবং জীবননাশের হুমকি দেয়। ‘এ ছাড়া একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে +৩১৩২৬৫৫ নম্বর থেকে ফোন করে মামুনুল হক পরিচয় দিয়ে গালিগালাজ করে এবং জীবননাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় আইনের সাহায্য চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।’ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ওলিয়ার রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় আমার ব্যক্তিগত মোবাইলে মামুনুল হক পরিচয় দিয়ে ফোন আসে। আমাকে গালিগালাজ করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।’
সাধারণ ডায়রির কপি
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, তোর মনে যা খেতে চায় তাই খেয়ে নে, আর বেশি দিন বাঁচতে পারবি না।’ আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হুমকি দেয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’গেল সোমাবার ওয়ালিয়ার রহমানকে যে নোটিশ দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি মো. ওলিয়ার রহমান, গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আপনার বড় জামাতা হাবিবুর রহমান, মেঝ জামাতা অর্থাৎ জান্নাত আরা ঝর্ণার সাবেক স্বামী মো. জাফর শহিদুল ইসলাম, সর্বাধিক সমালোচিত আপনার মেঝ মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার কথিত স্বামী মো. মামুনুল হকসহ সবাই উগ্রপন্থী ইসলামী সংগঠনের (হেফাজতে ইসলাম) সঙ্গে জড়িত। আপনার মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণা অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত। এমনকি আরো জানা যায় যে, আপনার স্ত্রীও জামায়াতপন্থী।’হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে পরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয় কখনো দলীয় নেতাদের জানাননি ওলিয়ার রহমান। তাই তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।নোটিশে ওলিয়ার রহমানকে কেনো ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার স্বপক্ষে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
ঝর্ণার বাবাকে দেয়া নোটিশ
এ বিষয়ে ওলিয়ার রহমানের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।কী হয়েছিল সোনারগাঁ রিসোর্টেসম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্ট নামে একটি আবাসিক অবকাশ যাপন কেন্দ্রে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে নিয়ে সময় কাটাতে যান হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।মামুনুল ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও পরে পুলিশের জেরায় তিনি যেসব তথ্য দেন, তাতে অনেক গরমিল পাওয়া যায়।রিসোর্টের সঙ্গীর নাম, তার বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা নিয়ে দুই ধরনের তথ্যের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ফোনালাপ হেফাজত নেতার বিয়ের দাবির সত্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।ফোনালাপের একটিতে বোঝা যায়, ঘটনার পরপরই মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী (ঝর্ণা) তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে ওই নারীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে যেন তার স্ত্রী ভুল না বোঝেন। পরে বাসায় এসে বুঝিয়ে বলবেন।পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে ওই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায়, মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি এই দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।এরই মধ্যে মামুনুলের রিসোর্টের সঙ্গীনির বড় ছেলে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে বাবার সংসার ভাঙার জন্য মামুনুলকে দায়ী করেন।