করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকের কাছে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে রিকশা। কিন্তু তাতেও বিপত্তি।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় মূল সড়ক ধরে যেতে চান না রিকশাচালকরা। ফলে যাত্রীদের বর্ধিত ভাড়ায় যেতে হচ্ছে গন্তব্য।
বাসা থেকে কার্যালয়ে যাওয়ার পথে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে এ প্রতিবেদক।
গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শুক্রবার সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বাসাবো থেকে রওনা হওয়ার সময় বাসার সামনেই পাওয়া গেল রিকশা। কিন্তু ব্যাটারিচালিত হওয়ায় চালকদের কেউ মেরুল বাড্ডা যেতে চাইল না।
বাসাবো টেম্পো স্ট্যান্ডের সামনে এসে দেখা মিলল মেরুল বাড্ডা যেতে আগ্রহী এক রিকশাচালকের। তবে গন্তব্যে যেতে তিনি চাইলেন অতিরিক্ত ভাড়া।
এসবের উত্তর জানার চেষ্টা করলে রিকশাচালক জানান, মূল সড়ক দিয়ে যেতে না পারার কারণে তাকে অনেকটা বেশি পথ ঘুরে যেতে হবে।
চালকের চাওয়া অনুযায়ী ভাড়া মেনে নেয়া হলো। কিন্তু রিকশায় ওঠার পর বাসাবো থেকে খিলগাঁও রেলগেট হয়ে মালিবাগ দিয়ে সোজা মেরুল বাড্ডার পথে চলেননি চালক। তিনি বাসাবো থেকে দক্ষিণ গোড়ান হয়ে সিপাহীবাগ দিয়ে পূর্ব রামপুরায় আসেন। তারপর রামপুরা টিভি সেন্টার দিয়ে মেরুল বাড্ডায় পৌঁছান।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে ছিল না যানবাহনের বাড়তি চাপ। বিধিনিষেধের মধ্যে সরকারি ছুটি হওয়ায় অফিস, গার্মেন্টস ছিল বন্ধ। তাই মূল সড়কের বদলে ভেতর দিয়ে আসার ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি যানজট পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে রাস্তার পাশের কাঁচাবাজার, দোকানপাট খোলার প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া মূল সড়কেও ছিল না গাড়ির বাড়তি চাপ।
আসার পথেই কথা হয় রিকশাচালক আব্দুল বাছেদের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকার গোড়ানে থাকেন। বয়স ৬৫ বছরের কাছাকাছি। স্ত্রীসহ দুই সন্তানের পরিবার।
কথা প্রসঙ্গ জানালেন শুক্রবার হওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও রিকশা চালানো যাচ্ছে। গত দুই দিন খুব সমস্যা হয়েছে। মূল সড়কে উঠলেই পুলিশ বাধা দিয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা আয় হবে তা দিয়েই চলতে হবে।
বাছেদ জানালেন, এখন রিকশা চালানোর জন্য বিকল্প পথ বেছে নিতে হয়। ফলে ১০০ টাকার ভাড়া পেতে দেড়শ টাকার পথ গাড়ি চালাতে হয়।
গত বছর লকডাউনের আগেই পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাছেদ।
এবার পাঠাবেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কষ্ট হলেও এখানেই থাকবেন। বাড়িতে পাঠালে খরচ বেশি। আর এবার তার আয়ও কম।
বেকায়দায় শ্রমজীবী মানুষ
সিপাহীবাগ বাজারের পাশে দেখা মিলল শ্রমজীবী মানুষের। ঘর মেরামত আর মাটিকাটার কাজের সরঞ্জাম নিয়ে বসে আছেন রাস্তার পাশে। ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমজীবীকে জটলা হয়ে বসে থাকতে দেখে রিকশা থামিয়ে কথা হলো রুবেল নামে একজনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে গত দুই দিনে কাজ নেই। করোনার কারণে এখন কেউ বাড়িতে নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু আমরা কাজ না পাইলে আয় করব কোথা থেকে।’
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চরম দুর্ভোগে শ্রমজীবী মানুষেরা। ছবি: নিউজবাংলা
রুবেল জানান, তার আয়ের ওপর নির্ভর করে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে আছে তার পরিবারসহ বাবা-মা। রমজানের এই সময়ে কাজ এমনিতেই কম থাকে। তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কবে শেষ হবে সেটিরও কোনো ঠিক নেই।
খোলা এক শাটার
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে বাড়তে থাকে গাড়ির লম্বা লাইন। যারা বের হয়েছে তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না, সেটি যাচাই করতেই এমন জট লেগে যায়।
এ ছাড়া শুক্রবার হওয়ায় রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলতে দেখা গেছে মোটরচালিত অটোরিকশা। অনেক দোকানেও খোলা ছিল একটি করে শাটার।
প্রজ্ঞাপনে ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে কঠোর বিধিনিষেধের কথা জানিয়েছে সরকার। ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
গত মার্চের শেষ সময়ে ক্রমাগত করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে প্রথম ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে ৩ এপ্রিল এক সপ্তাহের বিধিনিষেধের ঘোষণা দেয় সরকার, যা ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলে। এর পর তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়।