টিকিট কাটা সত্ত্বেও লকডাউনের কারণে যারা কর্মস্থলে যোগ দিতে যেতে পারেন নি, সেসব প্রবাসী কর্মীকে বিশেষ ফ্লাইটে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্তঃমন্ত্রণালয় এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরাতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে শনিবার থেকে শতাধিক বিশেষ ফ্লাইট অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ক্লিয়ারেন্স রয়েছে যেসব প্রবাসী কর্মীর, তাদের এই পাঁচ দেশে যেতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। যাদের এই কার্ড নেই, তারা অগ্রাধিকার পাবেন না। অবশ্য ভিসা বা আকামার মেয়াদের উপর ভিত্তি করেও প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বেবিচক) এম মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের বিষয়টি মাথায় রেখে শনিবার থেকে পাঁচটি দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরে শতাধিক বিশেষ ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কর্মীরা এসব ফ্লাইটে করে তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবে।’
এসব দেশে যদি কোনো বাংলাদেশি আটকে থাকেন আর তারা যদি দেশে ফিরতে চান তাহলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করে ফেরা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের কোভিড নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে এবং দেশে ফেরার পর ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্ত মানতে হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশেষ ফ্লাইট শুধুমাত্র ঢাকা থেকেই পরিচালনা করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে এসব দেশে যেতে যারা টিকেট কেটেছিলেন, তাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় আনা যাবে।
প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের টিকেটের দাম সহনীয় রাখতে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ সাধারণ ফ্লাইটের মতোই রাখতে বলা হয়েছে।
বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে রাজধানীর দিয়াবাড়ি, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রাখতে বলা হয়েছে বৈঠকে।
এর আগে, বুধবারই এই পাঁচ দেশে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার কথা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। কিভাবে এবং কত সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে তাই নির্ধারণ করা হয় বৃহস্পতিবারের এ সভায়।
পররাষ্ট্রসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন বৈঠকে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু থাকায় তা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসেনি।
এর মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন। প্রাথমিকভাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসা, পণ্যবাহী ও বিশেষ ফ্লাইটকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী কর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বেশি দামে টিকিট কিনেও তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
আট গন্তব্যে বিমানের ফ্লাইট
বিশেষ ফ্লাইটের অনুমোদনের পর শনিবার সকাল ৬টা থেকে আটটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবী, ওমানের মাস্কাট, কাতারের দোহা এবং সিংগাপুরে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
শনিবারের পরের নিয়মিত ফ্লাইটে যাদের টিকেট কাটা ছিলো তাদের নির্ধারিত সময়ের ছয় ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে শনিবার ভোরের সৌদি আরবের রিয়াদগামী বিশেষ ফ্লাইট বিজি ৫০৩৯ ভোর ৪টার পরিবর্তে ওই দিন সকাল সোয়া ৬টায় ছাড়বে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।