বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নির্দেশনা মানতাছি, কিন্তু প্যাট চলবে নানে’

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ২৩:৪৮

কঠোর লকডাউনে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষজনের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা, তারা অর্থকষ্টে ভুগছেন।  

‘বাজান আমরা গরিব মানুষ। কাম না হরলে খাইতে হারি না। আমি ইট ভাইঙ্গা খাই। এইহানের কেউ বাসায় কাম হরে, কেউ রিশকা চালায়, কেউ ভ্যান চালাইয় দিন আইনা দিন খায়। আমার দুই ছেলে ছোড। কোনো কাম হরতে হারে না। ছেলেগো বাফ নাই। অনেক কষ্ট করতাছি ছেলেগোরে লইয়া।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে বলছিলেন নাহার বেগম। তিনি দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডের শাহজালাল হাউজিংয়ের একটি বস্তিতে থাকেন।

কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, ‘কাম নাই। ঘর ভাড়া আড়াই হাজার। খামু কি আর ভাড়া দিমু কী?’

বসিলা রোডের শাহজালাল হাউজিং-এ ছোট ছোট কয়েকটি বস্তি দেখা যায়। সেখানের ছোট ঘুপড়ি ঘরে এক রুম ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৩০০ পরিবারের বাস এখানে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভোলা জেলার মানুষ।

তাদের একজন মো. ফখরুদ্দিন। পেশায় অটোরিকশা চালক। পুলিশ বৃহস্পতিবার তার রিকশা আটক করে। আটককৃত রিকশা তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে মাত্র বাসায় ফিরেছেন তিনি। ইফতারিতে কি খাবেন পরিবার নিয়ে তা এখনও জানেন না।

দুপুরে ফখরুদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘রিকশা ডাম্পিং করলে ছয় হাজার টাহা নেয়। আমরা গরীবেরা যে কী হালে আছি, এইডা উপরের আল্লা ছাড়া কেউ জানে না। আমরা সরকারের নির্দেশনা মানতাছি কিন্তু আমাগো প্যাট চলবে নানে।'

জরিমানার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘জরিমানা করছে কারণ, সরকার বোলে নিষিদ্ধ করছে রাস্তায় কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলবো না। হপায় রিকশা ছাড়াইয়া আইসা এক মুঠ পান্তা ভাত খাইছি। বিকালে যে বাসার মহিলাগো ইফতার কিন্না দিমু কই থেইকা সেই টাহাডাও নাই।

‘আমার রিকশা চালানো বন্ধ, আমাগো মহিলাগো বাসার কাম বন্ধ। এখন আমাগো গাড়ি ধইরা যদি এমন অত্যাচার করে, তাইলে আমরা বাচুম কেমনে?’

ফখরুদ্দিনের বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই দেখা হয় ৭০ বছরের বৃদ্ধা জামেনা খাতুনের সাথে। লকডাউনে তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এক মাইয়া আর আমি। আমাগো দুই জনের সংসার। মাইয়াডা ওই যে বিয়ার কাম-টাম হয় ওইহানে কাম করে। ওহন লকডাউনে তো বিয়া হয় না, তাই কাম বন্ধ। খুব কষ্টে আছি রে বাবা। দুই হাজার টিহ্যা ঘর ভাড়া।’

সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে না।’

একই হাউজিং-এর আরেক বস্তিতে থাকেন কুলসুম। পরিবারে অসুস্থ স্বামী। মুখ কালো করে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর কিডনির সমস্যা। আমরা খাওয়া-লওয়া নিয়া অনেক কষ্টে আছি।’

সাহায্যের কথা জানতে চাইলে কুলসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো বাসায় সাত জন মানুষ খাওয়ার। কিন্তু কেউ আমাগোরে সাহায্য করতাছে না। আমাগো লাইগা যা আহে নেতাফেতারা খাইয়ালায়। আগে কাজ কাম কইরা খাইছি। অহন কাজ কাম নাই। আমি যে রাস্তায় কাম করি, ওই কাম বন্ধ। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানি দেইখাই ঘরে বইসা আছি।’

রাজধানীর গৃহকর্মীরা আছেন বিপাকে। করোনা ও লকডাউনে বাসায় গৃহকর্মীর কাজ বন্ধ। তাদের একজন আমেনা বেগম। পরিবারের তিনজনের চলে তার একার উপার্জনে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বাসাবাড়িত কাম হরি। তারা ওহন তাগো বাসায় আমাগো ঢুকতে দেয় না। কোনো সাহায্যও হ্যারা দিতাসে না।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বন্ধ থাকবে সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ বিভাগের আরো খবর