বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চিকিৎসক লাঞ্ছনা: পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে অন্য বর্ণনা

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ২০:৩৯

হাইকোর্ট এলাকায় চিকিৎসককে জরিমানা করার বিষয়ে কিছু উল্লেখ না করে বলা হয়েছে কারওয়ানবাজারের একটি ঘটনার কথা। বলা হয়েছে, গাড়িতে চিকিৎসক ছিলেন না। আর চালক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। আর জাহাঙ্গীর গেটে চিকিৎসককে ‘কসাই’ বলার বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে কেবল বলা হয়েছে তিনি সেখানে ৩০ সেকেন্ড আটকে ছিলেন।

সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিনে কয়েকজন চিকিৎসককে জরিমানা ও লাঞ্ছনার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যত অস্বীকার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

তবে যে দুটি ঘটনা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে তার একটির বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি এতে। বরং যেটি নিয়ে আলোচনা কম, সেই বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। আবার অন্য একটি ঘটনায় চিকিৎসককে লাঞ্ছনা করার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। কেবল তল্লাশি চৌকিতে পরিচয় যাচাইয়ে কিছুটা সময় লাগার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কিছু মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া কিছু কিছু ব্যক্তিবর্গ পুলিশের চেকপোস্টে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।’

এতে বলা হয়েছে, কোভিড মহামারির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ মেনে চলা সকল নাগরিকের সমান দায়িত্ব। এ সমস্ত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ডিএমপি অঙ্গীকারাবদ্ধ।

কোনো পুলিশ সদস্য যাতে কোন অপেশাদার আচরণ না করেন, সে জন্য সর্বদা তাদের আচার আচরণ মনিটর করা হয়ে থাকে এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা ও প্রশিক্ষণ চলমান আছে বলেও জানানো হয় এতে।

পুলিশের কাজে সহায়তা দিতে নাগরিকদের অনুরোধ করার পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘১৪ এবং ১৫ এপ্রিল সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের কাজ অনেকটা সফলতার সঙ্গেই সস্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিষেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কষ্টকর কাজ। কেননা কিছু কিছু ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে যেতে পুলিশকে সারা দিনিই গলদঘর্ম হতে হয়েছে।

চিকিৎসক নাজমুলের কথা বলেনি পুলিশ

বুধবার বিধিনিষেধের প্রথম দিন হাইকোর্টের সামনে নাজমুল হক নামে এক চিকিৎসককে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয় মুভমেন্ট পাস না থাকার কারণে।

ওই চিকিৎসক স্কয়ার হাসপাতালে করোনা ইউনিটে কাজ করেন। তার বাবাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ কারণে তিনি মুন্সিগঞ্জ থেকে এসে অফিস করেন।

বুধবার কর্মস্থলে আসার সময় মুভমেন্ট পাস না থাকায় তাকে আটকায় পুলিশ। তিনি নিজের পেশাগত পরিচয় দিয়ে বলেন, তার জন্য এই পাস বাধ্যতামূলক নয়। তিনি নিজের পরিচয়পত্রও দেখান। তার পরেও তাকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এই বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় হয়, চিকিৎসকদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

সমালোচনার মুখে ঢাকা মহানগর পুলিশ ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে জরিমানার অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাজমুল হককে বিষয়টি জানিয়েও দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ডিএমপির বিজ্ঞপ্তি দেয়। তবে হাইকোর্টের কাছে নামজুল হকের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটির উল্লেখ করা হয়নি এতে।

এতে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকার একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘পুলিশ একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে বাইরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি গাড়িটি জনৈক চিকিৎসকের বলে বর্ণনা দেন। কিন্তু চিকিৎসক গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না।

‘ড্রাইভার উক্ত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। কিন্তু গাড়ির কাগজপত্রে বর্ণিত গাড়ির মালিকের সাথে বর্ণিত চিকিৎসকের সামঞ্জস্য না থাকায় ড্রাইভারের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।’

কসাই বলার ঘটনায় যে বক্তব্য

বুধবার তুমুল সমালোচিত দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে জাহাঙ্গীর গেট এলাকায়। সেখানকার চেকপোস্টে চিকিৎসক মমিনুল ইসলামকে উদ্দেশ করে এক পুলিশ কর্মকর্তা আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মমিনুল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইনডোর অফিসার (ইউরোলজি বিভাগ) হিসেবে কর্মরত। চলতি সপ্তাহে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালটির কোভিড ইউনিটে।

তিনি জানান, সকালে সিএনজি নিয়ে করোনা হাসপাতালে ডিউটিতে যাবার সময় জাহাঙ্গীর গেটে পুলিশ আটকালে তিনি নিজের পরিচয় দেন। হাসপাতালের পরিচয়পত্রও দেখান। তখন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কসাইগিরি ফলাস, তোর কসাইগিরি বাইর করতেছি, লাত্থি দিয়া পা ভাইঙা দিমু..... ’

ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে সেই চিকিৎসককে ‘সম্মানিত একজন নাগরিক’ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘নিজ বাসা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বের হলে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় স্মরণীসহ বেশ কয়েকটি চেকপোস্টের মুখোমুখি হন। এতে স্বভাবতই হাসপাতালে পৌঁছাতে তার দেরি হচ্ছিল।

‘জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন চেকপোস্টে তিনি ৩০ সেকেন্ডের মত আটকে ছিলেন বলে জানান। যাতায়াতের সময় যারা আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদেরকেই যাচাই করা হয়েছে যেটি চলমান বিধিনিষেধের প্রেক্ষিতে একটি যৌক্তিক বিষয়।’

পুলিশের আত্ম প্রশংসা

বিজ্ঞপ্তিতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসাও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘করোনার বিস্তার রোধে একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মানিত নাগরিক গণের অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে চলেছে পুলিশের সদস্যরা।

‘আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবাসহ জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে নিয়জিত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীয় বিনা কারণে বা উপযুক্ত পাস ব্যতীত কোনো ব্যক্তি যাতে রাস্তায় বের হতে না পারেন, তা নিশ্চিত কল্পে ২৪ ঘণ্টা ডিএমপির সদস্যগণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর