ফাঁকা সড়কে উচ্চ গতিতে মহাখালীর দিক থেকে আসছিল এক প্রাইভেট কার। গাড়িটিকে বিজয় সরণিতে চেকপোস্টে থামিয়ে দিল বেরসিক পুলিশ সদস্য। সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের ইশারায় থামে প্রাইভেটকারটি। লকডাউনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেন বাইরে এলেন? পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে ওই যুবকের উত্তর- ‘গরুর খাঁটি দুধ কিনতে বের হয়েছিলাম।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুটা কঠোর হলে, সেই যুবক তখন গল্প ফাঁদে। জানান, তার বাসা বেইলি রোডে। অসুস্থ বোনের জন্য গরুর খাঁটি দুধের সন্ধানে বাসা থেকে পূর্বাচলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু ওই যুবকের গাড়িতে কোনো দুধের প্যাকেট বা পাত্র ছিল না। আর গুগল ম্যাপ বলছে, বেইলি রোড থেকে পূর্বাচলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কৌশলী হয়ে মামলার ভয় দেখান। আর তাতেই সত্য বেরিয়ে আসে। যুবক স্বীকার করেন, তার গল্প বানানো।
বাইরে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট কেএম ইসমাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘উনি অতি জরুরি কোনো কারণ ছাড়া ঘুরছিলেন। আমরা তার গাড়িটি আটকালে তিনি জানান, তার বোন অসুস্থ। তার জন্য দুধ আনতে গিয়েছিলেন। বেইলি রোডের বাসা থেকে পূর্বাচল গিয়ে দুধ আনা অযৌক্তিক। তা ছাড়া উনার বোনের বাসা মালিবাগ। বেইলিরোড বা মালিবাগের আশপাশে দুধ পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
ওই গাড়িচালক মিথ্যে বলছিলেন জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট কেএম ইসমাম আরও বলেন, ‘মামলার কথা শুনে উনি সত্য স্বীকার করে জানান, এমনিতেই বের হয়েছিলেন। উনার এই ঘুরাফেরা সংক্রমণ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
লেখা-জরুরি ওষুধ, ভেতরে-উপহারের খেজুর
শাহবাগে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়ি আটকায় র্যাব। যদিও গাড়ির স্টিকারে লেখা ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত’।
চালকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন, গাড়ির ভেতরে ছিল কয়েকটি বক্স।
চালককের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কার্টন কিসের? চালক বললেন, খেজুরের বক্স। ডাক্তারদের গিফট করার জন্য কোম্পানি থেকে পাঠানো হয়েছে।
কাজটি জরুরি না হওয়ায় ওই চালককে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে রাস্তায় মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতি ছিল প্রথম দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোথাও কোথাও যানজট লাগতেও দেখা গেছে।
সকাল থেকে সড়কে ভাড়ায় চালিত যানবাহন হিসেবে ছিল শুধুমাত্র রিকশা। বাকি সবই ব্যক্তিগত যানবাহন। কারখানাসহ অন্যান্য শ্রমজীবীদের কর্মস্থলে যেতে হয়েছে হেঁটে।
বিধিনিষেধের প্রথম দিন নববর্ষের সরকারি ছুটি থাকায় বুধবার ফাঁকা সড়কগুলো বৃহস্পতিবার কিছুটা ভিন্ন রূপ পেয়েছে। প্রাইভেট কার আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চলাচল করছেন জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা।
চেকপোস্টগুলোতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। নগরীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলের বিধিনিষেধের সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করছে। বাইরে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ বা মুভমেন্ট পাস দেখতে চাইছে পুলিশ। যারা পারছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে জরিমানা।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জানান, ‘এই পথে শাহবাগের দিকে যারা যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তাদের প্রেসক্রিপশন বা অন্যান্য কাগজ দেখে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।’
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও ঢাকা জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে চলাচলে নিয়ন্ত্রণে তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ থেকে কাঁটাবন যাওয়ার পথে চেকপোস্ট বসায় র্যাব-৩। এতে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। এ সময় ১৫ জনকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘যে ১৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, তারা বের হওয়ার সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তাদের ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’