হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক তাণ্ডবে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এবার কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার বিকেল ৫ টার দিকে রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগ তাকে আটক করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৬ মার্চ থেকে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা। গুলিতে নিহত হয় চার জন।
দুই দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের কার্ালয়ে হামলা চালানো হয়।
৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজত কর্মীরা ওই এলাকা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে তাণ্ডব চালায়।
ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হেফাজতকে সতর্ক করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।
কেবল সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবের মামলাও আবার চালু হতে থাকে।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলাগুলোর তদন্ত স্থবির হলেও সেগুলো আবার চালু হচ্ছে
এর মধ্যে ৫ মের মামলায় রোববার রাতে পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে। সোমবার তাকে সাত দিনের রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ।
এক দিন পরেই গ্রেপ্তার হলেন সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ্। তাকেও শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেই সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শুধু ঢাকাতেই মামলা হয়েছিল ৫৩টি। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয় সেসব মামলায়। চারটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আরও দুটি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া অন্য ৪৭টি মামলার তদন্ত একেবারেই স্থবির। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হলেও আট বছর ধরে জামিনে আছেন হেফাজতের এখনকার আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, হেফাজতের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ঘটনায় রাজীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ
কিছুক্ষণ পর গ্রেপ্তার হন হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি মুফতি বশির উল্লাহ, যাকে গত ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ হরতাল চলাকালে তাণ্ডবের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের মামলায় আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মামুনুল হককেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটিয়া, হাটহাজারীকে একশরও বেশি হেফাজতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পর মারা যাওয়া হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যা অভিযোগ এনে করা মামলায় গত রোববার যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানেও বাবুনগরীকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২৬ ও ২৮ মার্চ এবং ৩ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা
হেফাজত নেতা রাজীর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ- জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট মামলায় হোসাইন রাজীকে আটক করা হয়নি। সম্প্রতি হেফাজত যেসব সহিংসতা করেছে, তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
‘তিনি এখন ডিবি হেফাজতেই আছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলার কাজ শেষ হলে আমরা তাকে থানায় হ্যান্ডওভার করব।’