রাজধানীর উত্তরা এলাকায় থাকেন আবদুর রহিম (ছদ্মনাম)। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর দিন বুধবার তার ইচ্ছা হলো শিং মাছ খাওয়ার। সে জন্য মুভমেন্ট পাস নিয়ে বাসা থেকে রওনা হন রাজধানীর মালিবাগের উদ্দেশে।
বাসা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন রহিম। কিন্তু পথে বাগড়া দেয় পুলিশ। রহিম পুলিশ সদস্যদের তার মুভমেন্ট পাস দেখান, যা তিনি নিয়েছিলেন বাজার করার জন্য। কিন্তু তাতে মন গলেনি পুলিশের।
ট্রাফিক পুলিশের কর্তব্যরত সার্জেন্ট মনে করেছেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিং মাছ কিনতে উত্তরা থেকে মালিবাগ যাওয়াটা পাসের অপব্যবহার। আর সেই ‘অপব্যবহারের’ জন্য জরিমানা গুনতে হবে রহিমকে।
সরকারি আদেশ অমান্য করার অভিযোগে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে বসানো চেকপোস্টে রহিমকে জরিমানা করা হয় তিন হাজার টাকা।
বেলা ১১টার দিকে রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে রহিমকে জরিমানা করেন সার্জেন্ট শেখ যোবায়ের আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন করছি।
‘একজন মানুষ উত্তরা থেকে মালিবাগ শিং মাছ কিনতে যাচ্ছে—এটা কোনোভাবেই জরুরি কাজ হতে পারে না।’
শুধু রহিম নন, পুলিশের বিবেচনায় মুভমেন্ট পাসের অপব্যবহার করা অনেকেই গুনেছেন এমন মামলা। সে অঙ্কটা কমপক্ষে তিন হাজার টাকা।
তবে এসব জরিমানা শুধু যারা প্রাইভেট কার, মাইক্রো বা মোটরসাইকেলের মতো ব্যক্তিগত যান ব্যবহার করছেন তাদেরই করা হচ্ছে। দরকার ছাড়া হেঁটে বা রিকশায় চড়ে যারা বের হয়েছেন তাদের পাস না থাকলে বাসায় ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।
এক সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন বুধবার সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। উদ্দেশ্য মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা।
সকাল ১০টা পর্যন্ত মানুষের চলাচল কিছুটা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কারণে বাইরে বের হতে দেখা গেছে। তবে গণপরিবহন ও অন্যান্য যানবাহন বন্ধ থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো ফাঁকা ছিল। তবে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। সঙ্গে ছিল রিকশাও।
কারা পাচ্ছে মুভমেন্ট পাস
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুভমেন্ট পাস ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হবেন তাদের এ পাস নিতে হবে বলে জানান তিনি।
ওয়েবসাইটটি উদ্বোধনের পর মঙ্গলবার সন্ধা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৬ লাখ হিট পড়েছে। ৬০ হাজার মানুষ মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন। একই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার মুভমেন্ট পাস দেয়া হয়েছে।
কেউ মিথ্যা বলে মুভমেন্ট পাস নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ঢাকার বাইরে গেলে মুভমেন্ট পাস লাগবে। এ ছাড়াও একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি গাড়ির নম্বর দিয়ে একাধিক পাস নেয়া যাবে না।
এমন মহামারির সময়ে কেউ মিথ্যা বলে পাস নেবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন আইজিপি।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, মোট ১৪টি ক্যাটাগরিতে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মুভমেন্ট পাস পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো হলো করোনা টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষা, মুদি মালামাল কেনাকাটা, কাঁচাবাজার, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন, পণ্য সরবরাহ, পাইকারি বা খুচরা বিক্রয়, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য।
পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি ক্যাটাগরিতে মুভমেন্ট পাস দেয়া হলেও তা অতিপ্রয়োজনীয় হলে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
আটকের বিষয়ে কী বলছে পুলিশ
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট এ বি এম হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হয়েছেন তাদের আটকানো হচ্ছে না। তবে অনেকেই সেটার অপব্যবহার করছে। আমরা সেটা বুঝতে পারলে মামলা দিচ্ছি।’
হেঁটে বা রিকশায় করে যারা চলাচল করছে তাদের ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কোথায় যাচ্ছে, কী উদ্দেশ্যে এসব বিষয় জানতে চাওয়া হচ্ছে। বের হওয়ার উদ্দেশ্য যৌক্তিক মনে না হলে যেখানে আটকানো হয়, সেখান থেকেই ফেরত দেয়া হচ্ছে।
পুলিশি জিজ্ঞাসার মুখে অনেকেই মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারছেন, অনেকেই পারছেন না। যারা পারছেন না, তাদের অধিকাংশের দাবি, তারা ওয়েবসাইটে ঢুকে পাস নিতে পারেননি। মঙ্গলবার থেকে সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
ব্যক্তির বের হওয়া অতি জরুরি মনে করলে পুলিশ সদস্যরা মুভমেন্ট পাস ছাড়াও ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে এসব ছাড় পাচ্ছে চিকিৎসা, মৃত্যু সংক্রান্ত ইস্যুতে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরা থানা এলাকার গলি গলিতে টিম পাঠাচ্ছি। যারা বের হচ্ছে, তাদের বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ জানাতে না পারলে ফেরত পাঠাচ্ছি।
‘আমরা কোনো বল প্রয়োগ করছি না, মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরাচ্ছি। আর যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ করছি।’
ঢাকার বাইরে থেকে মুভমেন্ট পাস ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি থানার টহল টিম সড়কে দায়িত্ব পালন করছে। মাইকিং করে মানুষকে ঘরে ফেরাচ্ছে।
‘এ ছাড়া আব্দুল্লাহপুর হয়ে যারা ঢাকায় যারা প্রবেশ করছে তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না, দেখা হচ্ছে। যাদের নাই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’