প্রায় আট বছর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের মামলায় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আরও এক নেতাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
এবার গ্রেপ্তার হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পরিচালিত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফউল্লাহ্।
মঙ্গলবার তাকে যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে ধরে আনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের একটি দল।
ডিএমপির ওয়ারী ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আজহার মুকুল নিউজবাংলাকে জানান, শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের পর যাত্রাবাড়ী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলার এজাহারে নাম ছিল মুফতি শরিফউল্লাহর।
আজহার মুকুল আরও জানান, মুফতি শরিফউল্লাহকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ি থানা তাকে আগামীকাল (বুধবার) আদালতে উপস্থাপন করে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গ্রেপ্তার মুফতি শরিফউল্লাহ্
এর আগে রোববার রাতে পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে। সোমবার তাকে সাত দিনের রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক দাবি করে তাদের ফাঁসির দাবি নিয়ে ৫ মে রাজধানী অবরোধ করে হেফাজত কর্মীরা। আগে থেকে ঘোষণা না থাকলেও হঠাৎ তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশের কথা জানায়। সেখানে গিয়ে অবস্থান ছাড়তে রাজি হয়নি।
দিনভর সেদিন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। হেফাজত কর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দিতে গভীর রাতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের পর হেফাজত কর্মীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
এই অভিযানে কোনো প্রাণহানি না হলেও হাজার হাজার মানুষকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হয়। যদিও পরে নিহত কারও নাম দিতে পারেনি হেফাজত।
সেই সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শুধু ঢাকাতেই মামলা হয়েছিল ৫৩টি। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয় সেসব মামলায়। চারটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আরও দুটি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া অন্য ৪৭টি মামলার তদন্ত একেবারেই স্থবির। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হলেও আট বছর ধরে জামিনে আছেন হেফাজতের এখনকার আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
ঢাকা মহানগর ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেমে নেই। আসামির সংখ্যা বেশি বলে যাচাই-বাছাই করে তদন্ত শেষ করতে সময় বেশি লাগছে। কিছু আসামি আমরা সেই সময় শনাক্ত করতে পারিনি। কিন্তু সমসাময়িক কিছু ঘটনায় তাদের শনাক্ত করা গেছে। তা ছাড়া অনেক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।’
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজত কর্মীদের তাণ্ডবের পর এই মামলাগুলোর তদন্ত আবার চালু হয়।
আরও পড়ুন: আট বছর জামিনে বাবুনগরী, ৪৭ মামলা স্থবির