কিশোরগঞ্জ সদরে এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩ জন সাবেক ছাত্রী চলতি বছর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন। এদের মধ্যে দুজন আবার জমজ বোন।
এই ২৩ জনের মধ্যে ২২ জন আবার পড়েছেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজে। আরেকজন পাস করেছেন ঢাকার হলিক্রস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে।
এ নিয়ে স্কুলটির শিক্ষক আর ছাত্রীরা তো বটেই, জেলা শহরের বাসিন্দারা আনন্দে ভাসছেন।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারই অভাবনীয় কোনো ফলাফল হয়নি। এর আগেও একই ব্যাচে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক ছাত্রী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
২০১৬ সালে এস ভির ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৫ জন আর ২০১৮ সালে ২৩ জন সাবেক ছাত্রী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনা করছেন।
১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কু্লটি বরাবরই ভালো ফলাফলের জন্য পরিচিত।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ কবীর, ‘মেয়েদের সাফল্যে আমি অবশ্যই আনন্দিত ও গর্বিত। তবে আনন্দ সেদিন পরিপূর্ণ হবে, যেদিন মেয়েরা মানবিক ডাক্তার হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুল থেকে ২৩৩ জন ছাত্রী অংশ নিয়ে পাস করে সবাই। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ (ফাইভ) পায় ১৯৩ জন।
তাদের মধ্যেই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনের স্থান পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর জানিয়েছেন, সবার তথ্য এখনও তাদের হাতে পৌঁছেনি। শেষ পর্যন্ত সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে তার ধারণা।
যারা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে চলেছেন, তাদের মধ্যে অমৃতি অরাত্রিকা ও নিভৃতি দ্যোতনা জমজ বোন। অমৃতি ভর্তি হবেন সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে আর নিভৃতি ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে।
অমৃতি অরাত্রিকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আমার শিক্ষার মূলভিত্তি আমার স্কুল, স্যার ও ম্যামদের আন্তরিকতা ও শাসন। আমরা দুই বোন একসাথে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এই বিষয়টা আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা একে অপরের সহযোগী। আমাদের নিজেদের মধ্যে নিয়মিত প্রতিযোগিতা বজায় রাখতাম। এই বিষয়টাও আমাদের প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন চারজন। তারা হলেন সুলতানা আক্তার সাদিয়া, তাসফিয়া নওশীন, আরফাতুন নাহার সুমাইয়া ও নোসাইবা হোসেন সাবা।
সাদিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এই প্রাপ্তির মূলভিত্তি তৈরি হয়েছিল এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকরাও যে বন্ধুর মতো হতে পারেন, সেটা এই স্কুলে না পড়লে বুঝতেই পারতাম না।’
সাবার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি গর্বিত, আমার পুরো পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত। তবে এই ক্ষেত্রে আমার মেয়ের নিরলস চেষ্টা, মনোবল আর তার বেসিক বা ভিত্তিটা শুরু হয়েছিল এই স্কুল থেকেই।’
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যালে অমৃতি ছাড়াও ভর্তি হবেন সিনথিয়া বিনতে মান্নান, রেজওয়ানা আফরিন ইকরা।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন নিশাত নাবিলা ও সাদিয়া হক।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নওশীন তাবাসসুম ইসলাম।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নাজুফা তাসনীম দোলা।
বরিশালের শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নূসরাত আরা নিদ্রা ও আসমা সিদ্দিকা অংকন।
নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন উম্মে হাবিবা অন্তু।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আনজুমান আরা শাম্মী, তাজরিয়ান রাফিন মাহি ও অনন্যা সাহা।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন নওশীন তাবাসসুম ও সায়মা আক্তার।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ফারহানা আক্তার বাঁধন, অনিকা তাসনিম অনি ও শেফা উম্মে সালমা সুস্মিতা।
এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ কবীর বলেন, ‘শুধু এ বছরই যে অনেকে মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ পেয়েছে এমন কিন্তু না। প্রতি বছরই এই স্কুল থেকে এ রকম অনেকেই চান্স পায়। এরা ছোটবেলা থেকেই যে পরিশ্রম করেছে এই পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে এই সফলতা। আশা করি, বুয়েটের ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে ও এই স্কুল থেকে অনেকেই সুযোগ পাবে।’
কেবল ছাত্রীরা না, স্কুলটি আলোচনায় এসেছে, শিক্ষকদের সাফল্যের কারণেও। প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর ২০১৯ সালে দেশের সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।